কাউন্সিলরদের বৈঠকে সততা নিয়ে কড়া পার্থ

সারদা-কাণ্ডের কোনও প্রভাব পুরভোটে পড়বে না বলে বারেবারেই দাবি করছেন প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু, দলের ঘরোয়া বৈঠকে দলের এক শীর্ষ নেতা কার্যত মেনে নিলেন, দলের ভাবমূর্তি নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। ভোটে জিতে কাউন্সিলর হলে ‘বেআইনি লেনদেনে’ জড়ানো যাবে না বলে তিনি সতর্ক করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীদের। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, পদে পদে দুর্নীতির অভিযোগে ‘বিব্রত’ হওয়ার সম্ভাবনা এড়াতে মরিয়া চেষ্টা করছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

কিশোর সাহা

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৩
Share:

পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে অভ্যর্থনা গৌতম দেবের। সোমবার শিলিগুড়িতে।— নিজস্ব চিত্র।

সারদা-কাণ্ডের কোনও প্রভাব পুরভোটে পড়বে না বলে বারেবারেই দাবি করছেন প্রদেশ তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু, দলের ঘরোয়া বৈঠকে দলের এক শীর্ষ নেতা কার্যত মেনে নিলেন, দলের ভাবমূর্তি নিয়ে তাঁরা চিন্তিত। ভোটে জিতে কাউন্সিলর হলে ‘বেআইনি লেনদেনে’ জড়ানো যাবে না বলে তিনি সতর্ক করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীদের। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, পদে পদে দুর্নীতির অভিযোগে ‘বিব্রত’ হওয়ার সম্ভাবনা এড়াতে মরিয়া চেষ্টা করছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

Advertisement

শুধু তা-ই নয়, ‘আর্থিকভাবে সম্পদশালী’ জনপ্রতিনিধির চাইতে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির সাদাসিধে নেতাকে ‘মেয়র-চেয়ারম্যান’ করার ইঙ্গিতও দিচ্ছে তৃণমূল নেতৃত্ব। সোমবার শিলিগুড়িতে দলের ৪৭ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পরে অনেকেই বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে। এমনকী, শিলিগুড়িতে তৃণমূল ক্ষমতাসীন হলে মেয়রের পদের জন্য নান্টু পাল, কৃষ্ণ পাল কিংবা রঞ্জন শীলশর্মাদের মতো দাপুটে, বিত্তবান নেতাদের পাশাপাশি সাদামাঠা, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রতুল চক্রবর্তীর নামও যে দল বিবেচনা করবে, তা-ও বুঝিয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব। শেষ দৌড়ে পরাক্রম জেতে না পরিচ্ছন্নতা, তা নিয়ে কানাঘুষো শুরু হয়েছে দলের অন্দরে।

দলের ওই ঘরোয়া বৈঠকে ঠিক কী বলেছেন শিক্ষামন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থবাবু? দলের অন্দরের খবর, স্বচ্ছতা, সততা এবং যোগ্যতা বিচার করেই যে মানুষ ভোট দেন, সে কথা প্রার্থীদের মনে রাখার পরামর্শ দেন পার্থবাবু। দলীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, এর পরেই পার্থবাবু খানিকটা কড়া ভাষায় সতর্ক করে জানিয়ে দেন, ‘‘ভোটের আগে একতলা বাড়ি। ভোটে জেতার পরে তা রাতারাতি প্রাসাদ হয়ে গেল। গাড়ি হল। পুকুর হল। চা বাগান হল। অনেক ধনসম্পত্তি হল। এটা কিন্তু, মানুষের নজরে পড়ে। মানুষ সবই বোঝেন। কাজেই এমন কোনও কাজ করবেন না যাতে দল বিব্রত হয়, অস্বস্তিতে পড়ে।’’ তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই সময়েই আলোচনায় উঠে আসে যে, দাপুটে ও প্রচুর অর্থশালী না হলেও প্রতুলবাবুর মতো অনাড়ম্বর জীবনাপনে বিশ্বাসী নেতাদের সামনে রেখে এগোলে বিতর্ক এড়ানো যাবে।

Advertisement

তৃণমূল সূত্রেই জানা গিয়েছে, দলনেত্রীর নির্দেশেই শিলিগুড়ির কাউন্সিলরদের বারেবারে সতর্ক করে দিয়েছেন মহাসচিব। কারণ, শিলিগুড়িতেই তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টচার্যকে এসজেডিএ-এর চেয়ারম্যান করেও কয়েক মাসের মধ্যে অপসারণ করতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রীকে। রুদ্রবাবুর আমলে এসজেডিএ-এর বহু কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফেই আটটি মামলা হয়েছে। একাধিক ইঞ্জিনিয়র, জেলাশাসক গোদালা কিরণকুমার গ্রেফতার হয়েছেন। এসজেডিএ-র ঘটনায় তৃণমূলের কাউন্সিলর রঞ্জন শীল শর্মাকেও পুলিশ জেরা করেছে। তা ছাড়া শিলিগুড়ি পুরসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন কাউন্সিলরদের একাংশের হলফনামায় সম্পত্তির বহরের পরিমাণও প্রদেশ তৃণমূল নেতাদের অনেককে চমকে দিয়েছে।


প্রতুল চক্রবর্তী।—নিজস্ব চিত্র।

যেমন, তৃণমূলের এক প্রাক্তন কাউন্সিলরের স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে ৩ কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তি রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তাঁর এবং স্ত্রীর নামে জমি কেনা রয়েছে। যার বতর্মান মূল্য অন্তত ৪ কোটি টাকা। আরেক তৃণমূল কাউন্সিলর ও তাঁর স্ত্রীর স্থাবর-অস্থাবর মিলিয়ে ৭৪ লক্ষ টাকা রয়েছে। তাঁদের মাল্লাগুড়ি এলাকায় হোটেল এবং বিধান মার্কেটে অংশীদার হিসাবে একাধিক দোকানের মালিকানা রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় তাঁর নামে জমিও কেনা রয়েছে। সেই তুলনায় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক প্রতুলবাবুর কিছুই নেই। বিয়ে করেননি। একাই থাকেন। বিনে পয়সায় টিউশন পড়ান। ফলে, সারদা-কাণ্ডের পরে নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে প্রতুলবাবুদের সামনে রাখতে আগ্রহী দলের প্রদেশ নেতাদের অনেকেই।

তবে বৈঠকের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে পার্থবাবু মেয়র পদপ্রার্থী কে হবেন তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। যদিও একান্তে তৃণমূলের মহাসচিব বলেছেন, ‘‘পুরসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পরে সর্বজনগ্রাহ্য কেউ-ই মেয়র হবেন। সেটা দলনেত্রী চূড়ান্ত করবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement