বিশ্বস্ত হন, কর্মীদের বললেন রূপা

দলের ভিতরে বিশ্বস্ততার অভাব রয়েছে বলে বিধানসভা ভোটের মুখে দাবি করলেন বিজেপির রাজ্য সভানেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার দিনহাটার নৃপেন্দ্রনারায়ণ স্মৃতি সদনে দলের কর্মিসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওই কথা বলেন রূপা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০১৬ ০২:০৬
Share:

দিনহাটায় রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

দলের ভিতরে বিশ্বস্ততার অভাব রয়েছে বলে বিধানসভা ভোটের মুখে দাবি করলেন বিজেপির রাজ্য সভানেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। সোমবার দিনহাটার নৃপেন্দ্রনারায়ণ স্মৃতি সদনে দলের কর্মিসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওই কথা বলেন রূপা। তাঁর কথায় মঞ্চে বসে থাকা নেতারা থেকে সাধারণ কর্মীরাও অস্বস্তিতে পড়ে যান।

Advertisement

মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার সময় তিনি বলেন, “কিছু ব্যক্তিগত কথা বলব। ভাল হয় যদি আপনারা মোবাইল রেকর্ডিং বন্ধ করে রাখেন। কোথাও যেন দলের ভিতরে বিশ্বস্ততা ভয়ঙ্কর বেশি প্রয়োজনীয়।” তাঁর ওই কথার পরে কর্মীদের অনেকেই মোবাইল সুইচ অফ করে দেন। পরে ওই প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে বিজেপি নেত্রী বলেন, “মোবাইলে অনেকে রেকর্ডিং করে। সেগুলি বাইরে চলে যায়। সব থেকে বড় কথা, বক্তব্য শুনে উপলব্ধি করার বদলে রেকর্ডিং করা, ছবি তোলাতে মন বেশি থাকে। সে জন্যই ওই কথা বলেছি।”

শুধু তাই নয়, দলের কর্মী নেতারা সিপিএম-তৃণমূলের কাছে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বলেও সতর্ক করেন তিনি। পরে তিনি বলেন, “কেউ সিপিএম ছেড়ে বিজেপিতে যাচ্ছে। কেউ বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাচ্ছে। আবার কেউ বিজেপি ছেড়ে সিপিএমে। কেউ পেটের টানে বিক্রি হয়। কেউ প্রাণের ভয়ে বিক্রি হয়। এ কথা সবাই জানে।” জেলা বিজেপির এক নেতার কথায়, “আসলে দল পরিবর্তনের কথা বলেছেন নেত্রী। অনেকেই দলে আসছে আবার চলেও যাচ্ছে। সে কারণেই ওই বিষয়টি তুলে দলীয় কর্মী ও নেতাদের সতর্ক করেন তিনি।”

Advertisement

দলীয় সূত্র জানা গিয়েছে, গত লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপির সংগঠন বাড়তে শুরু করে। সিপিএম ছেড়ে অনেকেই বিজেপিতে ভিড়ে যায়। কিন্তু ওই সংগঠন ধরে রাখতে পারেনি বিজেপি। বিধানসভা ভোটের মুখে অনেকেই আবার দল বদলে বিজেপি ছেড়ে সিপিএমে যোগ দিচ্ছেন। তাতেই হতাশ হয়ে পড়ে নেত্রী ওই প্রসঙ্গ তোলেন।

এদিন দুপুর আড়াইটা নাগাদ দিনহাটায় পৌঁছন রূপা। তাঁর সঙ্গে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য রবীন্দ্রনারায়ণ চৌধুরী, শশী অগ্নিহোত্রী সহ জেলা নেতারা ছিলেন। মঞ্চের কাছে পৌঁছতেই নেত্রীকে ঘিরে ধরে ছবি তুলতে শুরু করেন কর্মী, নেতারা। মঞ্চ পর্যন্ত পিছনে পিছনে গিয়ে ছবি তোলেন অনেকে। মঞ্চের সামনে থাকা সমর্থকরাও নেত্রীর ছবি তুলতে উৎসাহী হয়ে ওঠেন। সেই সময় অনেক নেতাই ছবি তোলার বদলে নেত্রীর বক্তব্য শোনার আর্জি জানাতে থাকেন। পরে রূপা মঞ্চে উঠে মোবাইল বন্ধ রাখার আর্জি জানান। কিন্তু দলের ভিতরে কোথায় বিশ্বস্ততার অভাব, তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়।

দলের অন্দরের খবর, বিজেপির মধ্যে রূপার একটি বিরোধী গোষ্ঠী সক্রিয় রয়েছে। সেই কারণে কর্মিসভার রাখা তাঁর বক্তব্য কোনওভাবেই যাতে বাইরে না চলে যায় সে ব্যাপারে তিনি সতর্ক ছিলেন। বিশ্বাসের প্রশ্ন তুলে তিনি সবাইকে সতর্ক করে দিয়েছেন বলেই অনেকে মনে করছেন। রূপা এ দিন বলেন, “আমি রাজনীতিতে এক বছর হল এসেছি। আমি অনেকটাই অজ্ঞ। অনেকে দীর্ঘ দিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। লড়াই করছেন। আপনারা অনেকটাই জানেন। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এখন পেটের রাজনীতি। যা লজ্জার।” কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নমূলক কাজের কথাও তুলে ধরেন তিনি। কংগ্রেস-সিপিএমের জোট নিয়ে কটাক্ষ করেন তিনি।

শাসক দল তৃণমূল বা সিপিএম কেউই রূপার বক্তব্যকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “মানুষ বিজেপির সঙ্গে নেই। তাঁদের কথা কেউ শোনেন না। রাজ্যের যা উন্নয়ন হচ্ছে, তা মানুষ নিজের চোখেই দেখছে।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অনন্ত রায় বলেন, “সাম্প্রদায়িক দলকে কেউই প্রশ্রয় দেয় না। মানুষ বিজেপিকে আস্তকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে। মানুষের জোট পশ্চিমবঙ্গে সুশাসন ফেরাবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement