Bayron Biswas

বিড়ি ব্যবসায়ী থেকে বিধায়ক, তৃণমূল ছুঁয়ে কংগ্রেসে যাওয়া বাইরনের উত্থান রকেট গতিতেই

পড়াশোনায় বরাবরের ‘অমনযোগী’ বাইরন মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ব্যবসার কাজে যোগ দেন। মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের বাসিন্দা বাইরনকে তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।

Advertisement

প্রণয় ঘোষ

সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০২৩ ২৩:০০
Share:

বাইরন বিশ্বাস। নিজস্ব ছবি।

বিড়ি ব্যবসায়ী হিসাবেই রাজনীতিকদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা শুরু। সেই সূত্রেই রাজনীতিতে ‘হাতেখড়ি’। রাজ্য রাজনীতিতে নিজের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসেই বাজিমাত করলেন বাইরন বিশ্বাস। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর ‘অপরাজেয়’ হয়ে ওঠা শাসক তৃণমূলকে সাগরদিঘিতে হারিয়ে দিলেন বাম সমর্থিত এই কংগ্রেস প্রার্থী। শুধু তা-ই নয়, বাইরনের এই জয় গত বিধানসভা নির্বাচনে ‘শূন্য’ হয়ে পড়া ‘হাত শিবির’কে পঞ্চায়েত ভোটেও বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisement

পড়াশোনায় বরাবরের ‘অমনযোগী’ বাইরন মাত্র ১৬ বছর বয়সেই ব্যবসার কাজে যোগ দেন। মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের বাসিন্দা বাইরনকে তার পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি। যোগ দেওয়ার মাত্র ৪ বছরের মধ্যেই বাবার প্রতিষ্ঠা করা ‘জিৎ বিড়ি’ সংস্থার মালিক হন। তার পর থেকে রকেট গতিতে বাড়তে থাকতে ব্যবসার পরিধি। হাত দেন স্কুল, হাসপাতাল, রাসায়নিকের কারখানা-সহ আরও নানাবিধ ব্যবসাতেও। সাফল্যও আসে তাতে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হাতে ধরে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যান বাইরন। ব্যবসার কাজে বিভিন্ন জেলায় তাঁর যাতায়াত বাড়তে থাকে। সমাজসেবী হিসাবে পরিচিত মুখ হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের সঙ্গে তৈরি হয় যোগাযোগও। সেই সূত্রেই রাজনীতির বৃত্তে বাইরনের প্রবেশ।

জেলার রাজনীতিতে কান পাতলে শোনা যায়, শুরুর দিকে তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে অত্যন্ত ভাল সম্পর্ক ছিল বাইরনের। কিন্তু সেই ‘সুসম্পর্ক’ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। বাইরনের ঘনিষ্ঠমহলেরও দাবি, শমসেরগঞ্জের যে এলাকা থেকে বাইরনের উঠে আসা, ‘বিড়ি গড়’ হিসাবে পরিচিত সেই ধুলিয়ান ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকেই তৃণমূলের প্রতীকে বিধায়ক হয়েছেন জাকির হোসেন এবং ইমানি বিশ্বাসেরা। শাসকদলের সঙ্গে সম্পর্কে থেকে খুব সুবিধা করতে পারবেন না জেনেই ধীরে ধীরে জেলার ‘দোর্দণ্ডপ্রতাব’ কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে থাকেন বাইরন। তার পর যোগও দেন হাত শিবিরে। তাঁর এক ঘনিষ্ঠের কথায়, ‘‘বাইরনের বাবা বাবর বিশ্বাস কখনও সক্রিয় ভাবে রাজনীতি না করলেও কট্টর কংগ্রেস সমর্থক। কংগ্রেসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির এটাও বড় কারণ। সাগরদিঘির উপনির্বাচনের ফল প্রকাশের পর মনে হচ্ছে, দাদার কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।’’

Advertisement

সাগরদিঘিতে কংগ্রেসের প্রার্থী হিসাবে শাসকদলের বিরুদ্ধে লড়াইটা নেহাতই সহজ ছিল না বাইরনের কাছে। রাজ্যের পালাবদলের সময় থেকেই সাগরদিঘি ধারাবাহিক ভাবে তৃণমূলের পাশে থেকেছে। ২০২১ সালের বিধানসভায় নির্বাচনেও ওই কেন্দ্র থেকে ৫০ হাজারেরও বেশি ভোটে জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের সুব্রত সাহা। সেই নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে পৌঁছে গিয়েছিল কংগ্রেস। সেখান থেকে উপনির্বাচনে প্রায় ২৩ হাজার ভোটে জিতেছেন বাইরন। বৃহস্পতিবার ভোটের ফলাফল স্পষ্ট হওয়ার পরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর বলেন, ‘‘আমাদের প্রার্থী যেমন বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের জোটের ভোট পেয়েছেন, তেমনই পেয়েছেন তৃণমূলের বিক্ষুব্ধদের ভোটও। তা ছাড়া যে সব বিজেপি ভোটাররা তৃণমূলকে হারাতে চেয়েছিলেন, তাঁরাও কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দিয়েছিলেন।’’

তবে প্রার্থী হিসাবে বাইরনকে সমর্থন নিয়ে শুরুতে সিপিএমের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছিল। এক জন উদ্যোগপতিকে সমর্থন করা নিয়ে মতানৈত্য প্রকাশ করেছিলেন জেলার অনেক বাম নেতা। তবে শেষমেশ বাম যুব সংগঠনের জেলা নেতৃত্বের দাবিকে মান্যতা দিয়েই আনুষ্ঠানিক ভাবে বাইরনকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত নেয় বামেরা। মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে প্রতিকুর রহমানের মতো বাম নেতানেত্রীদের হাত প্রার্থীর প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ডিওয়াইএফআইয়ের মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক সন্দীপন দাস বলেন, ‘‘তৃণমূল বিরোধী যে জনমত তৈরি হয়েছে, তার উপর ভিত্তি করে আগামী দিনের রূপরেখা ঠিক করতে হবে। সব জায়গায় ছুৎমার্গ রাখলে মানুষ আমাদের প্রত্যাখ্যান করবেন।’’

ভোটে জেতার পর বামেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেছেন বাইরন। তিনি বলেন, ‘‘ভোটারদের সঙ্গে কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করব না। কংগ্রেসের পাশাপাশি বহু বাম কর্মী-সমর্থকেরা আমায় ভোট দিয়েছেন। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও আমার যোগাযোগ ছিল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement