বেলঘরিয়ায় রেল অবরোধ। মঙ্গলবার। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটের প্রথম দিনে কলকাতা-সহ সারা রাজ্য জুড়েই পথে থাকলেন বাম নেতা-কর্মীরা। সকাল সকাল সিপিএমের প্রথম সারির বেশ কিছু নেতাকে গ্রেফতার করে হাজতে পুরল পুলিশ। পরের দিন ধর্মঘট করতে নামলে বামেদের ‘উত্তম-মধ্যম’ দেওয়া হবে বলে হুমকি দিলেন রাজ্যের এক মন্ত্রী। বামেরা আবার পাল্টা মন্ত্রীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ এবং প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলল। এ সবের জেরেই দু’দিনের ধর্মঘটকে ঘিরে তুঙ্গে উঠল বাম এবং তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের স্নায়ুর লড়াই।
ধর্মঘট ডেকে ঘরে বসে থাকা চলবে না বলে এ বার কর্মীদের জন্য কড়া নির্দেশিকা জারি করেছিল সিপিএম। কার্যক্ষেত্রেও মঙ্গলবার দেখা গিয়েছে, অন্যান্য বারের চেয়ে এ বারের ছবিটা আলাদা। বাম কর্মী-সমর্থকেরা জেলায় জেলায় রাস্তায় মিছিল-পিকেটিং করেছেন। স্থানীয় ভাবে নানা জায়গাতেই সড়ক এবং রেল অবরোধ হয়েছে। কোথাও কোথাও বাস ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। আবার যাদবপুর, দমদম-সহ বিভিন্ন এলাকায় ধর্মঘটের সমর্থনে মিছিলের উপরে সরাসরি তৃণমূলের বাহিনীই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যার প্রেক্ষিতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘‘এ রাজ্যে বিজেপির সব চেয়ে ব়়ড় প্রতিনিধি তৃণমূলই। ধর্মঘট ছিল বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে। সেই ধর্মঘট ভাঙতে বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে এত তৎপরতা দেখা গেল না! কিন্তু তৃণমূল ধর্মঘট ভাঙতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল!’’ একই সুরে বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নানের মন্তব্য, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে ধর্মঘট। এখানে বিজেপিকে রক্ষা করতে কারা এগিয়ে আসছে, কারা বিজেপির ‘বি টিম’ হয়ে কাজ করছে, আবার স্পষ্ট হয়ে গেল!’’
তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেছেন, ‘‘মানুষই ধর্মঘট ব্যর্থ করে দিয়েছেন। বাংলায় ৩৪ বছরের বাম শাসনের ক্ষত এখনও দগদগে। তার পরে আবার কর্মনাশা বন্ধ ডাকায় মানুষই তা ব্যর্থ করেছেন।’’ কিন্তু ধর্মঘটীদের উপরে তৃণমূলের হামলার অভিযোগ আছে। পার্থবাবুর জবাব, ‘‘এ ব্যাপারে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে। তবে ধর্মঘটকারীরা নিজেরাই বিক্ষিপ্ত ঘটনা ঘটিয়ে বলছে ধর্মঘট সফল!’’
মিছিল এবং বিক্ষোভ করার সময়ে এ দিন সকালেই যাদবপুরে গ্রেফতার করা হয় বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তীকে। শিয়ালদহের কাছে মিছিল থেকে গ্রেফতার করা হয় সিটুর রাজ্য সম্পাদক অনাদি সাহুকে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর ওই দুই সদস্য-সব বাকিদের রাতে লালবাজার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। দক্ষিণ দিনাজপুর, জলপাইগু়ড়ির দুই জেলা সম্পাদক-সহ দলের রাজ্য কমিটির অন্তত ৬ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। সূর্যবাবুর বক্তব্য, ‘‘ধর্মঘট সমর্থনকারীদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার জন্যই নেতাদের প্রথমে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে তাতে কর্মীদের মনোবল আরও বেড়ে গিয়েছে!’’ তৃণমূলের পার্থবাবুর আবার কটাক্ষ, ‘‘সবর্ত্রই ২০ জন লোক নিয়ে অবরোধ করে তার পরে পুলিশের কাছে ওঁরা আত্মসমর্পণ করেছেন!’’ সূর্যবাবু এবং সিটুর রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, প্রয়োজনে কৌশল বদলে আজ, বুধবার তাঁরা পথে নামবেন।
যদিও সূর্যবাবুদের হুঁশিয়ারি দিয়ে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেছেন, ‘‘কাল (বুধবার) প্রস্তুত থাকছি আমরা। জেলার প্রতিটি রাস্তার মোড়ে মোড়ে আমাদের ছেলেরা থাকবে। কাল সিপিএম বন্ধ করতে এলে উত্তম-মধ্যম দাওয়াই খাবে! যে মার খাবে, তাতে শিক্ষা হয়ে যাবে!’’ ওই মন্তব্যের জবাবে সূর্যবাবু জানিয়েছেন, বিভিন্ন থানায় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর করা হবে। তাঁর সংযোজন, ‘‘পুলিশ অভিযোগ না নিলে আমরা আদালতে যাব।’’
আলিপুর আদালতে এ দিন অবশ্য এক প্রস্ত বির্তক বাধে পুলিশ ধর্মঘটীদের কোমরে দ়ড়ি দিয়ে নিয়ে আসায়। আইনজীবীদের একাংশ প্রশ্ন তোলেন, ‘রাজনৈতিক অভিযুক্ত’দের এ ভাবে কেন কোমরে দড়ি পরানো হবে? বিক্ষোভ এবং আইনজীবীদের হস্তক্ষেপেই শেষ পর্যন্ত অভিযুক্তদের কোমর থেকে দড়ি খোলানো হয়।
যাদের বিরুদ্ধে ধর্মঘট, সেই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করার জন্য সাধারণ মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। ধর্মঘট ব্যর্থ করার জন্য তিনি কি তৃণমূলকেও ধন্যবাদ দেবেন? দিলীপবাবুর দাবি, ‘‘সিপিএমকে অক্সিজেন দেওয়ার জন্যই শাসক দল রাস্তায় নেমেছিল!’’