মার্টিন বার্ন রাস্তা সারাল কে, তরজায় সরগরম বসিরহাট

সদ্য পিচ পড়েছে। রাস্তার দু’ধারে গাঁথনি দিয়ে পায়ে চলার নব্য পথ। শীতের মুখে একেবারে ‘অচেনা’ হয়ে উঠেছে একদা ক্ষতবিক্ষত মার্টিন বার্ন রোড। বসিরহাটের শহর ছুঁয়ে এঁকেবেঁকে সাকুল্যে চার কিলোমিটার লম্বা সেই রাস্তাটাই এখন ‘টক অফ দ্য টাউন’। তবে রাস্তার স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য নয়, প্রশ্ন উঠেছে—ইটিন্ডা থেকে সাঁইপালা হয়ে টাকি রোডের দিকে ছুটে যাওয়া রাস্তাটার স্বাস্থ্য ফেরাল কে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বসিরহাট শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৫ ২১:৩৫
Share:

সদ্য পিচ পড়েছে। রাস্তার দু’ধারে গাঁথনি দিয়ে পায়ে চলার নব্য পথ। শীতের মুখে একেবারে ‘অচেনা’ হয়ে উঠেছে একদা ক্ষতবিক্ষত মার্টিন বার্ন রোড।

Advertisement

বসিরহাটের শহর ছুঁয়ে এঁকেবেঁকে সাকুল্যে চার কিলোমিটার লম্বা সেই রাস্তাটাই এখন ‘টক অফ দ্য টাউন’। তবে রাস্তার স্বাস্থ্যোদ্ধারের জন্য নয়, প্রশ্ন উঠেছে—ইটিন্ডা থেকে সাঁইপালা হয়ে টাকি রোডের দিকে ছুটে যাওয়া রাস্তাটার স্বাস্থ্য ফেরাল কে।

তা নিয়ে চৌমাথা থেকে পাঁচিল, লম্বাটে ব্যানার ঝুলছে, এ বলে আমার জন্য, তো ওর দাবি— আমি সেই জন, যে ফিরিয়েছে মার্টিন বার্ন রো়ডের রূপ। যুযুধান দুই পক্ষ কে?

Advertisement

ল্যাম্পপোস্ট বরাবর স্থানীয় বিধায়ক (বসিরহাট-দক্ষিণ) বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্য ঝুলিয়ে দিয়েছেন তাঁর দাবি— পুরপ্রধান-সহ বসিরহাটের ২২ জন কাউন্সিলরকে মার্টিন বার্ন রোড সংস্কারের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন। যে প্রচারে, দল-মত নির্বিশেষে সকলকে নিয়ে চলার কৌশল স্পষ্ট। শমীক বলছেন, ‘‘বিধানসভায় রাস্তাটার জন্য যখন গলা ফাটাচ্ছিলাম, তখন পাশে কে ছিল, শুনি!’’

গায়ে গা লাগিয়ে, তৃণমূলের ঢাউস ব্যানার অবশ্য বিজেপি বিধায়কের দাবি ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে বলছে— মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘সহযোগিতা’ খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ‘উদ্যোগ’ এবং বসিরহাট উন্নয়নের কাণ্ডারী, দীপেন্দু বিশ্বাসের ‘ঐকান্তিক প্রচেষ্টা’ই ওই রাস্তা সংস্কারের আসল কারণ। দীপেন্দুর কথায়, ‘‘মিথ্যাচার করে যে মানুষের মন পাওয়া যায় না, এটাই উনি (শমীক ভট্টাচার্য) বুঝছেন না।’’ এই দাবি আর পাল্টা টিপ্পনীর আবহেই ফুটছে মার্টিন বার্ন রোডের সংস্কারের অ্যাসফাল্ট।

বছর খানেক আগে, বসিরহাট উপ-নির্বাচনে শাসক দলের প্রার্থী দীপেন্দু বিশ্বাসকে হারিয়েই রাজ্যে তাদের এক মাত্র আসনটি শমীক ভট্টাচার্যের হাত ধরেই দখল করেছিল বিজেপি। সেই জয় ইস্তক, শমীক-দীপেন্দু আকচাআকচির বিরাম নেই। বিজেপি-র স্থানীয় নেতারা জানাচ্ছেন, এলাকায় খুচরো সমস্যা মেটানো থেকে উন্নয়ন— যে কোনও কাজে শমীক এগিয়ে এলেই তার ‘কৃতিত্বে’ ভাগ বসাচ্ছেন দীপেন্দু। এ ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। শমীক বলছেন, ‘‘বসিরহাটের এই রাস্তা নিয়ে বিধানসভায় অন্তত তিন বার বলেছি আমি। কখনও পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় কখনও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের কাছে ছুটে গিয়েছি। আর, এখন রাস্তা সংস্কার নিয়ে কৃতিত্ব দাবি করছে অন্য এক জন। এ কি তামাসা হচ্ছে?’’ শমীকের দাবি, বসিরহাট পুরসভার কাউন্সিলরদের সকলেরই উন্নয়নকল্পের টাকা রয়েছে ওই রাস্তা সংস্কারে। তিনি বলেন, ‘‘সব দলের জনপ্রতিনিধিদের ঐক্যের ভিত্তিতে মার্টিন বার্ন রাস্তার সংস্কার হচ্ছে। ধন্যবাদ দিতে হলে পুর প্রতিনিধিদের দেব, উনি কে?’’

দীপেন্দু কে? ময়দান এখনও তাঁকে ‘দীপু’ নামেই চেনে। মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল কিংবা মহমেডান— ময়দানের তিন বড় ক্লাবই তাঁকে চেনে, শেষ মুহূর্তে নেমে গোল করে দলকে জেতানোর কাণ্ডারী হিসেবে। তবে ওইটুকুই। রাজনীতিতে তাঁর কৃতিত্ব অবশ্য স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও মাথা খুঁড়ে মনে করতে পারছেন না। দক্ষিণ বসিরহাট এলাকার দলীয় চেয়ারম্যান থেকে তিনি অবশ্য সদ্য উত্তীর্ণ হয়েছেন উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক পদে। তবে তাঁর দলেরই এক নেতা বলছেন, ‘‘তা দিয়ে কিছু যায় আসে না। ও তো আর জনপ্রতিনিধি নয়, ও কী করে রাস্তা সংস্কারের কৃতিত্ব দাবি করতে পারে?’’ স্থানীয় পুরসভার এক দলীয় কাউন্সিলরের প্রশ্ন, ‘‘সংস্কারের খরচ ১.৩৮ কোটি, তা-ই বা দীপেন্দু জানল কী করে?’’

বসিরহাট পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কংগ্রেসের অসিত মজুমদার বলছেন, ‘‘বিধানসভায় দীপেন্দু একটা রাজনৈতিক দলের টিকিট পেয়েছিল, ব্যাস। এই তো ওর রাজনৈতিক পরিচয়। রাস্তায় ব্যানার লাগিয়ে ও কৃতিত্ব দাবি করার কে?’’ ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সিপিএমের শেখ সহিদুল্লা বলছেন,‘‘ বর্ষার সময়ে ওয়ার্ডের রাস্তা সংস্কারের জন্য যে টাকা এসেছিল আমরা বৈঠক করে সেই টাকায় ওই রাস্তার সংস্কারের কাজ করার সম্মতি দিয়েছি। দীপেন্দু কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসল!’’

যা শুনে, দীপেন্দু বলছেন, ‘‘আমাদের চেষ্টায় মুখ্যমন্ত্রী এবং পুরমন্ত্রী ওই রাস্তা সংস্কারের টাকা বরাদ্দ করেছেন। খাদ্যমন্ত্রী বসিরহাটের উন্নয়ন করছেন। তা দেখে ওদের (বিরোধীদের) হিংসে হচ্ছে। তাই এমন আজগুবি প্রশ্ন তুলছেন।’’ প্রশ্নটা কি আজগুবি?

বসিরহাটের শাসক দলের এক তাবড় নেতা ধরিয়ে দিচ্ছেন, ‘‘সামনে ভোট, অন্যের কৃতিত্বে একটু ভাগ না বসালে এখন চলে দাদা!’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement