গত বছর শান্তিনিকেতনের আশ্রম মাঠে বসন্ত উৎসবে এমনই ভিড় হয়েছিল। ফাইল চিত্র
আর কোনও সংশয় নেই। দোলের দিনই হচ্ছে বিশ্বভারতীর ঐতিব্যবাহী বসন্ত উৎসব। মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এক ম্যারাথন বৈঠকের পরে এ কথা জানান জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু। ওই বৈঠকেই এ দিন সিদ্ধান্ত হয়েছে, আশ্রম মাঠের পরিবর্তে এ বার পৌষমেলার মাঠে আয়োজিত হবে বসন্তোৎসব। গত বছর লক্ষাধিক মানুষের ভিড়ের চাপে আশ্রম মাঠে যে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল, তা এড়াতেই এই সিদ্ধান্ত বলে বিশ্বভারতী ও প্রশাসন সূত্রের খবর।
বৈঠকের পরে বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের কাছ থেকে আমরা যে যে সহযোগিতা চেয়েছিলাম, তারা তা করতে রাজি হয়েছে। বিশ্বভারতী শুধু সাংস্কৃতিক দিকটি দেখবে। বাকি যা যা ব্যবস্থা করা দরকার, তা প্রশাসন করবে।’’
বসন্ত উৎসব নিয়ে গত ৬ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের ডাকা বৈঠকে ছিলেন না বিশ্বভারতীর কেউ। ওই বৈঠকের দিনই মাঘ মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থাকায় কারও থাকা সম্ভব হয়নি। বসন্ত উৎসব নির্বিঘ্নে করতে এ দিন বৈঠক ডেকেছিল বিশ্বভারতী। তাতে
জেলা প্রশাসনের কর্তা ও জনপ্রতিনিধি-সহ ৪৪ জনকে ডাকা হয়েছিল। এ দিন বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সভাকক্ষে বিকেল ৫টার কিছু পর থেকে বৈঠক শুরু হয়। জেলাশাসক ও উপাচার্য ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ, বিশ্বভারতীর কর্মসচিব আশা মুখোপাধ্যায়, কর্মসমিতির সদস্য সুশোভন বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিশ্বভারতীর একাধিক আধিকারিক। তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠক চলে।
বেরিয়ে জেলাশাসক বলেন, ‘‘মানুষ চাইছিলেন দোলের দিনই বসন্ত উৎসব হোক। সে কথা মাথায় রেখে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনের তরফে সব রকম ভাবে সহযোগিতা করা হবে।’’ কী কী সেই সহযোগিতা জানতে চাওয়া হলে, তিনি বলেন, ‘‘বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যে যে ধরনের সহযোগিতা চাইবেন, তাই-ই করা হবে।’’ সুশোভনবাবু জানান, বসন্ত উৎসব যাতে সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করা যায়, তার জন্য এ বছর আশ্রম মাঠ থেকে উৎসবের আয়োজন পৌষমেলার মাঠে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘প্রশাসনের সহযোগিতায় এ বারের উৎসব খুব ভাল ভাবেই করা যাবে বলে আমাদের আশা।’’
গত বছর আশ্রম মাঠে লক্ষ লক্ষ লোকের ভিড়ে উৎসবের তাল পুরোপুরি কেটে যায়। সে কারণেই উৎসব ফের মেলা মাঠে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত। কিন্তু ঘটনা হল, যে বিশৃঙ্খলার যুক্তি দেখিয়ে মেলামাঠে বসন্ত উৎসব করার সিদ্ধান্ত এ দিন হল, সেই একই যুক্তিতে কয়েক বছর আগে থেকে মেলামাঠ থেকে সরিয়ে আশ্রম মাঠেই আয়োজন করা হচ্ছিল
উৎসবের। বিশ্বভারতীর আশ্রমিকদের একাংশ মনে করাচ্ছেন, শেষ যে বছর মেলামাঠে বসন্তোৎসব হয়েছিল, সেই বছরও বিশৃঙ্খলার সাক্ষী থেকেছে শান্তিনিকেতন। পাঁচিল ও বেড়া টপকে কাতারে কাতারে লোক মেলার মাঠ ছেড়ে আশ্রম প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েছিলেন।
প্রবীণ আশ্রমিক সৌরীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, এই অনুষ্ঠান প্রথমে হত আম্রকুঞ্জে। ভিড় এড়াতে গেল গৌড় প্রাঙ্গণে। সেখান থেকে উৎসব আয়োজন হতে শুরু করল আশ্রম মাঠে। এ বার আবার মেলামাঠে হবে বলে ঠিক হল। তাঁর কথায়, ‘‘কিন্তু, মেলামাঠের মতো খোলা জায়গায় এই উৎসব আয়োজন করলে আদৌ কি বিশৃঙ্খলা এড়ানো যাবে? বিশ্বভারতীর সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের যথাযথ নিরাপত্তা কি দেওয়া সম্ভব হবে?’’
এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। চ্যালেঞ্জ প্রশাসনের কাছেও।