অর্জুন সিংহ। ফাইল চিত্র।
দু’জন চুরি করছেন, আর তার দায় দলের ৯৮ শতাংশের উপর পড়ছে। বিজয়া সম্নিলনীর এক অনুষ্ঠানে গিয়ে এমনই মন্তব্য করলেন তৃণমূল নেতা তথা ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ। তাঁর কথায়, “যে ভাবে টাকার পাহাড় দেখা যাচ্ছে, তাতে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। দু’জন চুরি করলেও ৯৮ শতাশংশের উপর প্রশ্নচিহ্ন লেগে গিয়েছে। মানুষ ভাল চোখে দেখছেন না।” কিন্তু তাঁর এই ‘দুই চোর’-এর তালিকায় কারা, তা কিন্তু স্পষ্ট ব্যখ্যা করেননি ব্যারাকপুরের সাংসদ।
শিক্ষক নিয়োগ-দুর্নীতি মামলা নিয়ে তোলপাড় রাজ্য। যে ভাবে একের পর এক টাকা উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে, সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন ব্যারাকপুরের সাংসদ। এক জন, দু’জনের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে, আর তার কারণেই দলের বাকিদের নিয়েও মানুষের অন্য ধারণা তৈরি হচ্ছে বলেও মত তাঁর। শিক্ষক নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় ইতিমধ্যেই প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য গ্রেফতার হয়েছেন। অন্য দিকে, গরু পাচার মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। কিন্তু যে ভাবে ‘দুই চোর’-এর কথা তাঁর বক্তব্য বার বার তুলে এনেছেন অর্জুন, সেই ‘দুই চোর’ বলতে কাদের ইঙ্গিত করলেন তিনি? তা নিয়েই শুরু হয়েছে জল্পনা।
অর্জুন বলেন, “যে দু’জন চুরি করছে তাঁদের চিহ্নিত করতে হবে। মানুষ কিন্তু সব কিছু নজর রাখছে।” তাঁর কথায়, “এমনিতেই কিছু মানুষের জন্য সমস্যা হচ্ছে। তার মধ্যে এই ঘটনার জন্য ট্রেনে, বাসে নানা প্রশ্নের মুখোমুখিও হতে হচ্ছে। যা শুনে কষ্টও হচ্ছে।” কয়েক জনের জন্য গোটা দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, এটা কাম্য নয় বলেই মনে করেন অর্জুন। এই ঘটনার জন্য মানুষ কিন্তু একটু ‘খারাপ নজরে’ দেখা শুরু করেছেন। তাই তিনি মনে করেন, এখনও সময় আছে। তাই যত দ্রুত শুধরে নেওয়া যায়, ততই মঙ্গল। তাঁর কথায়, “মানুষ কিন্তু একটু খারাপ নজরে দেখছেন। সময় আছে, আমাদের শুধরে নিতে হবে।”
টাকার পাহাড়, দলের ভাবমূর্তি নষ্ট— অর্জুনের এই মন্তব্য প্রসঙ্গে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “অর্জুন সিংহের কাছ থেকে মানুষ হয়তো দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনও ভাষণ, কোনও বক্তব্য শুনতে চান না। তাঁর অবস্থানটা কী তা-ও জানতে চান না।”
শমীক আরও বলেন, “অর্জুন যখন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি যোগ দিয়েছিলেন, তখন তিনি সর্বোচ্চ নেত্রী, তাঁর পরিবারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে এবং তৃণমূলের গুন্ডারাজ, টাকা আদায় করার যে রাজনীতি, তার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছিলেন। আমার মনে হয় অর্জুন সিংহের থেকে এই আপ্তবাক্য, কোনও দুর্নীতিবিরোধী প্রচার পশ্চিবঙ্গের কোনও সচেতন মানুষ মেনে নেবেন না।”