দিন কয়েক ধরে জল্পনা চলছিল। অবশেষে তা সত্যি করে রবিবার তৃণমূলে ফিরে গেলেন ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ।
রবিবার বিজেপি ছাড়লেন অর্জুন। তিন বছর পরে ঘরওয়াপসি হল তাঁর। ঘাসফুলে যোগ দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে।
পাট শিল্পকে হাতিয়ার করে দলের বিরুদ্ধে বেশ কয়েক দিন আগে থেকে বেসুরো ছিলেন অর্জুন। ওই বিষয়টিকেই সামনে এনে তিনি বিজেপি ত্যাগ করলেন।
প্রায় ২৭ বছরের রাজনৈতিক জীবনে বার বার রং বদল করতে দেখা গিয়েছে অর্জুনকে। প্রথমে কংগ্রেস সেখান থেকে তৃণমূলে আসেন তিনি। যদিও অর্জুনের দাবি, তৃণমূল গঠনের আগে থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভাল ছিল।
অর্জুনের রাজনীতি শুরু ভাটপাড়া থেকেই। পরে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের একচ্ছত্র অধিকারী হয়ে ওঠেন তিনি। আত্মীয়-স্বজন থেকে পরিবারের অনেক সদস্যকেই রাজনীতিতে নিয়ে আসেন অর্জুন।
জগদ্দলের বাসিন্দা অর্জুন তৃণমূল স্তর থেকে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে প্রথম বার ভাটপাড়া পুরসভার কাউন্সিলর হন তিনি। তখন তিনি কংগ্রেসে।
১৯৯৭ সালে তৃণমূল প্রতিষ্ঠার পর অর্জুন কংগ্রেস ত্যাগ করেন। ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা ২২ বছর ছিলেন তৃণমূল কাউন্সিলর। তার পর তৃণমূল ত্যাগ করেন অর্জুন।
২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ন’বছর ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন এখনকার ব্যারাকপুরের সাংসদ।
কাউন্সিলরের পাশাপাশি ভাটপাড়ার বিধায়কও হন অর্জুন। তৃণমূলের প্রথম বিধানসভা ভোট থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছেন তিনি। ২০০১ সালে প্রথম বার তৃণমূলের বিধায়ক হন অর্জুন। ২০১৯ সালে ঘাসফুল ছেড়ে আসার আগে পর্যন্ত তিনি বিধায়ক ছিলেন।
২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে অর্জুনকে ঝাড়খণ্ডের দায়িত্ব দেয় তৃণমূল। তার কিছু দিন আগে থেকেই অবশ্য ঘাসফুলের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন তিনি।
ওই বছর লোকসভা নির্বাচনের আগে সদলবলে তৃণমূল ছাড়েন তিনি। দিল্লিতে বিধায়ক-পুত্র পবন সিংহকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন অর্জুন।
২০১৯ সালে বিজেপির টিকিটে জয়ী হন অর্জুন। তৎকালীন প্রতিপক্ষ দীনেশ ত্রিবেদীকে হারিয়ে ব্যারাকপুরের সাংসদ হন তিনি।
বিজেপির সাংসদ হওয়ার পর তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন অর্জুন। তাঁকে হত্যা করার ছক করা হচ্ছে এমন অভিযোগও করেন তিনি।
২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে সক্রিয় ভাবে অংশ নেন অর্জুন। পুত্র পবনের ভাটপাড়া ছাড়া ব্যারাকপুরের আর কোনও আসনেই বিজেপিকে জেতাতে পারেননি তিনি। অর্জুনের গড়ে ফোটে ঘাসফুল।
বিধানসভা ভোটে বিজেপি পরাস্ত হওয়ার পর ক্রমশ কোণঠাসা হন অর্জুন। দূরত্ব তৈরি হয় দলের সঙ্গে।
গত পুরসভা ভোটে কয়েকটি জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হলেও, অর্জুনকে খুব বেশি সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। বিজেপির সঙ্গে তাঁর দূরত্ব আরও বাড়ে।
গত দু’মাস ধরে কেন্দ্রের পাটনীতি নিয়ে সরব হন বিজেপি সাংসদ। অর্জুনের নিশানায় কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী। জানা যায়, ক্ষোভ সামলাতে গত সপ্তাহে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সঙ্গেও তাঁর কথাও হয়। অবশ্য তাতেও বরফ গলেনি।
রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলে যাওয়ার ইঙ্গিত দেন অর্জুন। প্রশংসা করেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সমালোচনা করেন বিজেপি নেতৃত্বের।
রাজ্য বিজেপির দলীয় পদ এবং সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা না দিয়েই ‘ফুল বদল’ করলেন অর্জুন।