মঙ্গলকোট

মাঝ রাতে বোমা-গুলি, গ্রেফতার পাঁচ

মাঝ রাতে নৌকা করে এসে গ্রামে বোমাবাজি করল তৃণমূলের এক গোষ্ঠী। পাল্টা বোমা, গুলি চালায় অন্য গোষ্ঠীও। রাতভর দু’পক্ষের হামলা-পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত হয়ে রইল মঙ্গলকোটের কল্যাণপুর গ্রাম। দু’পক্ষের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কাটোয়া শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৪ ০১:২৩
Share:

মাঝ রাতে নৌকা করে এসে গ্রামে বোমাবাজি করল তৃণমূলের এক গোষ্ঠী। পাল্টা বোমা, গুলি চালায় অন্য গোষ্ঠীও। রাতভর দু’পক্ষের হামলা-পাল্টা হামলায় উত্তপ্ত হয়ে রইল মঙ্গলকোটের কল্যাণপুর গ্রাম। দু’পক্ষের পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে ৩৫টি বোমা ও ৭টি কাতুর্জের খোলও উদ্ধার করা হয়েছে। তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর নেতা সাবুল শেখ মঙ্গলকোট থানায় দলেরই পঞ্চায়েত সদস্য অঞ্জন মুন্সি, তার দাদা আজাদ মুন্সি-সহ বেশ কয়েকজনের নামে অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্ত নেতা অবশ্য সব অভিযোগই অস্বীকার করেছেন।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কল্যাণপুর গ্রামের মফিজুল শেখ-সহ বেশ কয়েক জন দীর্ঘ দিন ধরে নানা কারণে গ্রামছাড়া রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে থানায় অভিযোগ নেই, এমন কয়েকজনকে চাষের কাজের জন্য সম্প্রতি গ্রামে ঢোকার অনুমতি দেয় পুলিশ। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, তারপর থেকেই টুকটাক গ্রাম্য বিবাদ লেগেই থাকত। পুলিশের দাবি, গ্রাম দখলের লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য অঞ্জন মুন্সি, মফিজুল শেখদের প্রায় ৩০ জনের একটি দল বীরভূম থেকে নৌকা করে অজয় পেরিয়ে কল্যাণপুর গ্রামে ঢোকে। তারপরেই দু’পক্ষের মধ্যে বোমা-গুলির লড়াই শুরু হয়। পুলিশ খবর পেয়ে গ্রামে গেলেও বোমা-গুলির লড়াইয়ের জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি। পরে মঙ্গলকোট থানা থেকে আরও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের দাবি, এই সংঘর্ষে ৬০টিরও বেশি বোমা পড়েছে এবং ১৫ রাউন্ডের মতো গুলি চলেছে। এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে জাকির শেখ, ফিরোজ শেখ, রমজান শেখ, সাহিদুল্লা শেখ ও লালু শেখকে প্রথমে পুলিশ আটক করে, পরে বৃহস্পতিবার দুপুরে গ্রেফতার করেছে।

তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর দাবি, রাতে গোটা গ্রাম ঘুমিয়ে পড়ার পরে অজয় পেরিয়ে এক দল দুষ্কৃতী গ্রামে ঢুকে লুঠপাট চালায়, বোমা-গুলি ছোড়ে। মঙ্গলকোট থানায় তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর নেতা সাবুল শেখ অভিযোগ করেন, ওই দুষ্কৃতীর দল তাঁর বাড়ি ছাড়াও গ্রামের ৫-৬ জনের বাড়িতে বোমা মেরেছে। রাস্তায় দাঁড়িয়ে গুলি চালিয়েছে। একটি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীবাহী গাড়িও ভাঙচুর চালিয়েছে। ওই গোষ্ঠীর নেতা লাখুড়িয়া অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি অসীম দাসের অভিযোগ, “ওই দুষ্কৃতীদের জ্বালায় গ্রামের মানুষের ঘুম চলে গিয়েছে। প্রায় দিনই বোমাবাজি করে। এ দিন বীরভূম থেকে নৌকা করে এসে গ্রামে হামলা চালাবে তা বুঝতে পারিনি। পুলিশ সঠিক সময়ে না এলে বড় রকম ক্ষতি হত।” পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে তিনজন জখম হয়েছেন। তার মধ্যে একজনকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

Advertisement

অন্য দিকে অঞ্জন মুন্সি গোষ্ঠীর দাবি, অভিযোগকারী সাবুল শেখের লোকেরা মফিজুল শেখের বাড়িতে লুঠপাট চালায়। মফিজুলের অনুগামীদেরও গ্রাম ছাড়া করে দিয়েছে। ফাঁকা বাড়িতে গবাদি পশু থেকে আসবাবপত্র লুঠ করেছে ওই দুষ্কৃতীরা। বৃহস্পতিবার রাতে গোপন আস্তানা থেকে অঞ্জন মুন্সি তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “ভরা নদী পেরিয়ে আমরা গ্রামে হামলা করতে গিয়েছি, এটা কী বিশ্বাসযোগ্য! আমরা যাতে ফিরে গ্রামে শান্তিতে বাস করতে না পারি তার জন্য এটা চক্রান্ত। পুলিশ অন্যায় ভাবে কয়েকজন নিরীহ বাসিন্দাকে গ্রেফতার করেছে।”

পুলিশের দাবি, অঞ্জন গোষ্ঠীর লোকেরা দু’তিনটে নৌকা করে বীরভূম থেকে মঙ্গলকোটে ঢোকে। নতুনহাটের কুনুর নদীর সেতু থেকে পুলিশের গাড়ির আলো দেখে দুষ্কৃতীর দল গ্রাম ছাড়ার প্রস্তুতি নিতে থাকে। গ্রামে ঢোকার আগেই ওরা অজয়ের বাঁধের উপর উঠে বোমাবাজি করতে করতে পালিয়ে যায়। সরাসরি না বললেও পুলিশের দাবিকেই সমর্থন জানিয়ে তৃণমূলের মঙ্গলকোটের সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী বলেন, “বাইরের লোকেরাই গোলমাল পাকিয়েছে। গ্রামে যাঁরা বাস করেন, তাঁরা কোন দুঃখে অশান্তি করবেন?”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement