ডিমের উত্পাদন কম, চারাপোনা তেমন বাড়ছিল না। বড় হওয়ার আগেই মারা যাচ্ছিল। সেই জন্য ১০০ দিনের কাজে তৈরি হওয়া পুকুরে বড় মাছ ছাড়তে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল জেলা পরিষদ। সম্প্রতি বর্ধমান জেলা পরিষদের মত্স ও প্রানী সম্পদ স্থায়ী সমিতির এক বৈঠকে ঠিক হয়েছে মত্সজীবীদের এবার থেকে ৪-৫ কিলোগ্রাম ওজনের মাছ দেওয়া হবে।
সমিতি সূত্রে খবর, বড় মাছ থেকে মত্সজীবীরা ডিম পোনা চাষের মাধ্যমে বড় লাভের মুখ দেখবেন। মত্স্য ও প্রানী সম্পদ স্থায়ী সমিতির কর্মাধ্যক্ষ অলোক মাঝি বলেন, “জেলার অন্তত ৩০০টি এমন পুকুরকে চিহ্নিত করা হচ্ছে, যেগুলি ১০০ দিনের প্রকল্পের আওতায় কাটা বা সংস্কার করা হয়েছে। এই সব পুকুরে মত্স পালনের জন্য ৩০০টি মত্সজীবী ইউনিট তৈরি করা হবে। পেটে ডিম আছে এমন মাছ দেওয়া হবে ইউনিটগুলিকে। এই ডিম থেকে উত্পন্ন চারাপোনা বড় করে ইউনিটগুলি বিক্রি করবে। এতে জেলার বুকে মাছের উত্পাদনও বাড়বে, মত্সজীবীরা বড় লাভের মুখও দেখবেন।” সমগ্র পরিকল্পনায় জেলাপরিষদকে সাহায্য করছে জেলা মত্স উন্নয়ন পর্ষদ বা এফএফডিএ। কাজ শুরু হয়েছে মার্চ- এপ্রিলে। কর্মাধ্যক্ষর দাবি, “জুলাই মাসে বর্ষার মধ্যে প্রকল্পের লক্ষমাত্রায় পৌঁছোতে হবে।” সমিতি জানিয়েছে, প্রতিটি ইউনিটকে মত্স চাষে উত্সাহ দিতে প্রকল্পের আওতায় মোট ৪১০০ টাকা করে দেওয়া হবে। এই টাকা ইতিমধ্যে ১১০টি ইউনিটকে দেওয়া হয়েছে। বাকিদের দেওয়া হবে জুলাইয়ের মধ্যে।
কিন্তু এত বেশি সংখ্যক বড় মাছ কোথা থেকে দেওয়া হবে মত্সপালকদের? অলোকবাবু বলেন, “আউশগ্রামের যমুনাদিঘি সরকারি হ্যাচারিতে রয়েছে রুই কাতলা মৃগেল ইত্যাদি প্রজাতির বড় ও ডিম উত্পাদক মাছ। এই মাছই ওই সব পুকুরে ছাড়া হবে।” তিনি আরও বলেছেন, “আগে ৫০০ গ্রাম থেকে ১ কিলো ওজনের মাছ পুকুরে ছাড়তে দেওয়া হতো। তাতে ডিমের উত্পাদন কম হচ্ছিল, চারাপোনা তেমন বাড়ছিল না।” জেলার তেঁতুলমুড়ি গ্রামের মত্সজীবী মহম্মদ হানিফ শেখ বলেন, “জেলা পরিষদের কাছ থেকে চারাপোনা পাওয়া যাবে তা যেন উপযুক্ত সময়ে সরবরাহ করা হয়। তবে, ডিম ছাড়বে এমন মাছ দিলেই বেশি সুবিধা হবে।”
জেলা পরিষদের মত্স্য কর্মাধ্যক্ষ জানিয়েছেন, মাছের প্রজনন ও বৃদ্ধি সংক্রান্ত দু’টি ছোট গবেষনাগার তৈরি করা হবে কালনা-২ ও গলসি-২ ব্লকে। গবেষণাগারের জন্য ইতিমধ্যে কালনা-২ ব্লকে কৃষ্ণপুরে জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। গলসিরটি খোঁজা হচ্ছে। দু’টি গবেষণাগার ঠিক মতো কাজ করলে জেলার ভাতার, রায়না মন্তেশ্বর ও দুর্গাপুরে আরও চারটি এই ধরনের গবেষণাগার হবে। প্রতিটি গবেষনাগারে জলাশয়ের জল, মাটি ইত্যাদি পরীক্ষা করে তাতে কোন প্রজাতীর মাছের চাষ ভাল ভাবে করা যাবে, তা স্থির করা হবে।