ভরসা সুসংহত খনন, ভয় ধর্মঘটে

রুগ্‌ণ দশা কাটিয়ে সদ্য বেরিয়ে এসেছে সংস্থা। এর পরে নিজেদের অবস্থা আরও পোক্ত করতে অন্যতম ভরসা এই খনি। ইসিএলের ঝাঁঝরা খনিতে একটি মাত্র সুসংহত প্রক্রিয়ায় গত ডিসেম্বরে প্রায় ৭৫ হাজার টন কয়লা তোলা সম্ভব হয়েছে, যা দেশে রেকর্ড বলে সংস্থা কর্তৃপক্ষের দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৫ ০০:৩১
Share:

ইসিএলের ঝাঁঝরা প্রকল্প।—নিজস্ব চিত্র।

রুগ্‌ণ দশা কাটিয়ে সদ্য বেরিয়ে এসেছে সংস্থা। এর পরে নিজেদের অবস্থা আরও পোক্ত করতে অন্যতম ভরসা এই খনি। ইসিএলের ঝাঁঝরা খনিতে একটি মাত্র সুসংহত প্রক্রিয়ায় গত ডিসেম্বরে প্রায় ৭৫ হাজার টন কয়লা তোলা সম্ভব হয়েছে, যা দেশে রেকর্ড বলে সংস্থা কর্তৃপক্ষের দাবি। শ্রমিক অসন্তোষ বা বন্‌ধ-ধর্মঘটে উত্‌পাদন যাতে ব্যাহত না হয়, সে দিকেই এখন নজর কর্তৃপক্ষের। সম্প্রতি দেশ জুড়ে পাঁচ দিনের খনি ধর্মঘট দু’দিনের মাথায় উঠে যাওয়ায় তাই হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন তাঁরা।

Advertisement

এই সুসংহত খনন প্রক্রিয়া নিজেদের বেশ কিছু খনিতে চালু করেছে ইসিএল। সে জন্য কয়েকশো কোটি টাকা ব্যায় করেছে কয়লা মন্ত্রে। এর মধ্যে ঝাঁঝরা প্রকল্পটি অন্যতম প্রধান খনি হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। গত বছরের এপ্রিলে এই খনিতে উন্নত যন্ত্র ব্যবহার করে দু’টি আলাদা পর্যায়ে ধারাবাহিক ও সুসংহত উত্‌পাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার ফলও মিলেছে হাতেনাতে।

গত ডিসেম্বরই খনির উত্‌পাদন প্রক্রিয়া নানা রেকর্ড গড়েছে বলে দাবি ইসিএলের। সংস্থার সিএমডি-র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায় জানান, এই খনিতে ডিসেম্বরে একটি মাত্র সুসংহত উত্‌পাদন প্রক্রিয়ায় প্রায় ৭৫ হাজার টন কয়লা উঠেছে, যা দেশের কোনও খনিতে এক মাসে ওঠেনি। এ ছাড়া ডিসেম্বরে প্রায় এক লক্ষ ৫৪ হাজার টন কয়লা উত্‌পাদন হয়েছে, যা ইসিএলের ইতিহাসে প্রথম। নীলাদ্রিবাবু আরও জানান, ডিসেম্বরে ঝাঁঝরা থেকে প্রায় এক লক্ষ ৫৮ হাজার টন কয়লা সরবরাহ হয়েছে। দেশের কোনও খনি থেকে এর আগে এক মাসে এত কয়লা সরবরাহ হয়নি বলে তাঁর দাবি।

Advertisement

ইসিএলের তরফে বরাবরই দাবি করা হয়, ঝাড়খণ্ডের রাজমহল ও পাণ্ডবেশ্বরের শোনপুর বাজারি খোলামুখ খনি থেকে উত্‌পাদিত কয়লা থেকেই সংস্থার বাত্‌সরিক লাভের সিংহভাগ আসে। তাই যে কোনও আন্দোলন-ধর্মঘটে সাড়া পেতে শ্রমিক সংগঠনগুলি ঝাঁঝরা, রাজমহল বা শোনপুর বাজারির উত্‌পাদন ব্যাহত করার চেষ্টা করে। এই খনি দু’টিতেও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বার্ষিক প্রায় ২৫ লক্ষ টন কয়লা উত্‌পাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। ইসিএল কর্তৃপক্ষের আশা, চলতি অর্থবর্ষে এই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত অর্থবর্ষে তারা আগের সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে সাড়ে ৩৬ লক্ষ টন কয়লা তুলেছিল। লাভ হয়েছিল প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা।

তবে আশায় থাবা বসাচ্ছে আশঙ্কাও। তার মূল কারণ, ধর্মঘটের ভ্রূকুটি। মাঝে-মধ্যে ধর্মঘটের প্রভাব যদি এই খনিগুলিতে পড়তে থাকে তবে ক্ষতি হবে সংস্থার। এ নিয়ে চিন্তিত এলাকা বণিকমহলও। আসানসোল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি সুব্রত দত্ত মনে করেন, এই শিল্পাঞ্চলের প্রধান ভরসা হল খনি। তা কোনও ভাবে বাধাপ্রাপ্ত হলে এলাকার অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়বে।

শ্রমিক নেতারা অবশ্য আশ্বাস দেন, সেই পরিস্থিতি তৈরি হবে না। সিটুর বংশোগোপাল চৌধুরী, যৌথ সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক রামচন্দ্র সিংহ, আইএনটিইউসি-র চণ্ডী বন্দ্যোপাধ্যায়েরা দাবি করেন, ইসিএলে সাফল্য এসেছে শ্রমিক-কর্মীদের হাত ধরে। তাই ধর্মঘটের ফলে ক্ষতি হলে তা তাঁরাই বাড়তি পরিশ্রম করে পুষিয়ে দেবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement