কর্মী সমর্থকদের গলা ভেজাতে চা ঢালছেন প্রার্থী নিজেই। —নিজস্ব চিত্র।
প্রার্থীর নাম শুনেই কানাঘুষো বলাবলি শুরু হয়েছিল, ‘উনি তো বহিরাগত।’ কিন্তু প্রচারে নেমেই জোর গলায় সেই বহিরাগতের তকমা ঝেড়ে ফেলছেন বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী দেবশ্রী চৌধুরী।
কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে রাস্তায় নেমেই এই প্রার্থীর দাবি, “আমার বাড়ি বালুরঘাটে হলেও গত তিন বছর ধরে আমি বর্ধমানে দলের পর্যবেক্ষক। দলের সমস্ত কর্মসূচিতে হাজির থাকি। সুতরাং কোনও মতেই আমাকে বহিরাগত বলা চলে না।” কিন্তু বিজেপি-র হয়ে দাঁড়িয়ে জেতার আশা কি আদৌ আছে? দেবশ্রীর দাবি, “নির্বাচন একটা সংগ্রাম। প্রতিবাদও। তাই ভোটে দাঁড়ানো শুধু জয় বা পরাজয়ের জন্য নয়। আমরা এ বার দিল্লিতে ক্ষমতায় আসছি। রাজ্যেও দলের সংগঠন বাড়াতে হবে। তাই আমাদের অনেকেই ভোটে দাঁড়িয়েছেন।”
তৃণমূল ইতিমধ্যে প্রচা শুরু করে দিয়েছে, ভোট কেটে সিপিএমকে সুবিধা করে দিতেই ভোট লড়ছে বিজেপি। দেবশ্রী অবশ্য বলছেন, “তৃণমূলকে এ রাজ্যে জিতিয়ে কী হবে? রাজ্যের উন্নয়ন হবে কী করে? আমাদের জেতালে বরং কাজ হবে। মানুষ আমাদের ভোট দিলে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় থাকবে। তবেই তো উন্নয়ন হবে।” তাঁর দাবি, “সিপিএম যেমন ইউপিএ ১ সরকারকে ব্ল্যাকমেল করে গিয়েছে দিনের পর দিন, তেমনই তৃণমূল ইউপিএ ২-কে ব্ল্যাকমেল করেছে। তাই এখন ওরা বলেছে, ভোটে জিতে দিল্লিতে নির্ণায়ক শক্তি হব। কিন্তু জিতে সরকার গড়ব, বা সৎ-স্থিতিশীল সরকারকে সমর্থন করব, এমন কথা তো বলছে না? তার মানে, ওদের এ বার লক্ষ্য কেন্দ্রে বিজেপি সরকারকে ব্ল্যাকমেলের চেষ্টা করা।”
গত বারের লোকসভা ভোটে বর্ধমান পূর্ব আসনে বিজেপি প্রায় ৭১ হাজার ভোট পেয়েছিল। এ বার বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে কি তিনি জয়-পরাজয়ের নির্ণায়ক হয়ে উঠতে চাইছেন? দেবশ্রীর সাফ জবাব, “শুধু আমি কেন? বিজেপির সমস্ত প্রার্থীই রাজ্যের প্রতিটি আসনে নির্ণায়ক শক্তি। তৃণমূল ভয় দেখানোয় আমাদের মিছিলে কম লোক হতে পারে, তা বলে আমাদের পক্ষে ভোট কিন্তু কম পড়বে না।”
গত বার বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে বিজেপি অবশ্য ৫০ হাজারের সামান্য বেশি ভোট পেয়েছিল। এই কেন্দ্রের তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী নার্গিস বেগম পেয়েছিলেন সাড়ে চার লক্ষেরও বেশি ভোট। সিপিএম প্রার্থী সাইদুল হক জিতেছিলেন ১ লক্ষ ৮ হাজার ভোটে। গত বিধানসভায় পরিবর্তনের হাওয়ায় বর্ধমান-দুর্গাপুরের অন্তর্গত সাত বিধানসভায় বিজেপি-র ভোট কমে দাঁড়ায় প্রায় ৪২ হাজারে। দেবশ্রী অবশ্য বললেন, “এ বার অন্য ভোট। সরকারে গিয়ে তৃণমূল জনপ্রিয়তা খুইয়েছে। অন্য দিকে কেন্দ্রে দিন-দিন বিজেপির জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এ বার মোদী-ঝড়ই আমাদের টানবে।”