হিন্দুস্তান কেবলস কারখানা। —নিজস্ব চিত্র।
কারখানা অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া রয়েছে চূড়ান্ত পর্যায়ে। তবে তাতে চূড়ান্ত সিলমোহর দেওয়ার আগে রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তানকেবলসসের শ্রমিক-কর্মীদের জন্য শর্ত আরোপ করল কারখানা অধিগ্রহণে ইচ্ছুক অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড। দেশের নানা প্রান্তে তাদের কারখানায় কেবলসের শ্রমিক-কর্মীদের বদলি করতে চায় তারা। প্রত্যেক শ্রমিক-কর্মীর কাছে এ ব্যাপারে লিখিত সম্মতি চাওয়া হয়েছে। পুজোর ছুটির পরে এই নোটিস জারি করা হবে বলে কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে। এই শর্ত আরোপ নিয়ে ক্ষুব্ধ নানা শ্রমিক সংগঠন।
হিন্দুস্তানকেবলস সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ১২ সেপ্টেম্বর দিল্লির উদ্যোগ ভবনে একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। পৌরহিত্য করেন ভারী শিল্প মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব বিশ্বজিৎ সহায়। ছিলেন অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড, ডিপার্টমেন্ট অফ ডিফেন্স প্রোডাকশনস,কেবলস কারখানা ও ভারী শিল্প মন্ত্রকের আধিকারিকেরা।কেবলস কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কারখানার অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে ফেলা হবে। কিন্তু তার আগে সংস্থার ৮৩১ জন শ্রমিক-কর্মীকে লিখিত ভাবে সম্মতি দিতে হবে, দেশ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের বিভিন্ন কারখানায় বদলি হতে তাঁদের আপত্তি নেই।কেবলসের জনসংযোগ আধিকারিক হরিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পুজোর ছুটির পরেই সাধারণ শ্রমিক-কর্মীদের জন্য এই মর্মে নোটিস জারি করা হবে।” কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সম্মতিপত্রের বয়ান অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের তরফেই তৈরি করে দেওয়া হয়েছে।কেবলস সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, যাঁরা অন্যত্র বদলি নিতে চাইবেন না, তাঁদের সংস্থা থেকে বাধ্যতামূলক স্বেচ্ছাবসর নিতে হবে।
সংস্থার এক আধিকারিক জানান, সম্প্রতিকেবলসের কর্মীদের সাত মাসের বেতন অনুমোদনের সময়ে ভারী শিল্প মন্ত্রক পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, উৎপাদনশূন্য এই কারখানার শ্রমিক-কর্মীদের জন্য পরিকল্পনা বহির্ভূত খাতে ব্যয় দেখিয়ে আর বেতন অনুমোদন করা সম্ভব নয়। অতএব, এই কারখানার অধিগ্রহণের বিষয়টি এ বার সম্পূর্ণ করে ফেলতে হবে। তারই অঙ্গ হিসেবে শ্রমিক-কর্মীদের কাছ থেকে এই সম্মতিপত্র চাওয়া হচ্ছে।
ভারী শিল্প মন্ত্রক এবং অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ডের এই সিদ্ধান্তের কথা জানাজানি হওয়ার পরেই শ্রমিক-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকে সম্মতিপত্রে সই করে চাকরিতে বহাল থাকতে ইচ্ছুক। আবার যাঁদের অল্প কয়েক বছর চাকরি আছে তাঁরা এলাকা ছেড়ে যেতে রাজি নন। এই শর্ত আরোপের বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে বিরোধিতা না করলেও ক্ষোভ জানিয়েছে নানা শ্রমিক সংগঠনও। আইএনটিইউসি নেতা উমেশ ঝা, সিটু নেতা প্রদীপ সাহা, এইচএমএস নেতা বিরোজা বন্দ্যোপাধ্যায়েরা দাবি করেন, এই সিদ্ধান্ত একতরফা ভাবে নেওয়া হয়েছে। তবে সম্মতিপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি শ্রমিক-কর্মীদের ব্যক্তিগত বলে মনে করছেন তাঁরা।কেবলসস কারখানা সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, রূপনারায়ণপুরে কারখানার প্রায় ৪৫ একর জমি জবরদখল হয়ে আছে। কারখানা অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার আগেই সেই জমি পুনরুদ্ধার করতে হবে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে সংস্থার জনসংযোগ আধিকারিক তথা এস্টেট অফিসার হরিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায় জানান,কেবলসস অধিগ্রহণের প্রশ্নে সংস্থার জবরদখল হয়ে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই কাজ দ্রুত শুরু করা হয়েছে।