দুর্ভোগে কালনার মানুষ। —নিজস্ব চিত্র।
কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই হাঁটা দায় রাস্তায়। কোথাও এক হাঁটু কোথাও আবার তারও বেশি জল জমে যায়। তবে কালনা শহরে এ সমস্যা নতুন নয়। প্রতি বর্ষাতেই কমবশি এই দুর্ভোগ বরাতে লেখা থাকে শহরবাসীর। তবে এ বছর শহরের জল-ছবি বদলাতে আজ, বৃহস্পতিবার মহকুমা প্রশাসনের তরফে একটি বিশেষ বৈঠক ডাকা হয়েছে। আধিকারিকদের দাবি, বৈঠকে নিকাশি সমস্যার সমাধান খোঁজা হবে।
বাসিন্দারা অবশ্য হাতেকলমে ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত বিশেষ ভরসা পাচ্ছেন না। তাঁরা জানান, বর্ষায় নরকযন্ত্রণা বাঁধাধরা। প্রতি বছরই বৃষ্টির জল জমে বৈদ্যপুর মোড়, নতুন বাসস্ট্যান্ড চত্বর, হাসপাতাল মোড়, মেডিসিন কমপ্লেক্স, মহিষমদির্নী ইন্সটিটিউশনের সামনের রাস্তাগুলিতে। বাসস্ট্যান্ড চত্বরে জল জমার ফলে এসটিকেকে রাস্তার অবস্থাও বেহাল হয়ে পড়ে। নিম্নচাপের ফলে টানা বৃষ্টি হলে নিকাশির অবস্থা আরও শোচনীয় হয়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত দু’দশকে শহরের জনসংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত হয়নি। পুরনো নালাগুলির গভীরতা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। শহরের জল নিকাশির অন্যতম ভরসা বৈদ্যপুর নালা দিয়ে জল বেহুলা নদীতে বেরিয়ে যায়। কিন্তু এটি দীর্ঘদিন সংস্কার হয় না। এছাড়া ছোট নালাগুলির উপর জনবসতি গজিয়ে ওঠায় সমস্যা আরও বেড়েছে। এছাড়া নিয়মিত পুকুর বোজানোর ফলে বর্ষার জল ধারণে অসুবিধা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা হাসান মোল্লাও বলেন, “দীর্ঘক্ষণ জল জমে থাকায় রাস্তার গর্ত আরও বড় হয়ে যায়। ফলে ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন চালাতে বিপাকে পড়তে হয়।”
পুরসভার ১৮টি ওয়ার্ডেই কমবেশি একই হাল। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার জানানো সত্ত্বেও পুরবোর্ড সমস্যা সমাধানে তেমন কোনও উদ্যোগ নেয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা কল্পনা মল্লিকের ক্ষোভ, “প্রতি বছরই শোনা যায় মাস্টার প্ল্যান হচ্ছে। কিন্তু বোর্ডের পরিবর্তন হলেও সেই প্ল্যান কোনদিনই কার্যকর হয় না।”
নিকাশি নিয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষোভের আঁচ পেয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিও। কয়েক মাস পর কালনা পুরসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে পথে নেমেছে বিজেপি। বিষয়টি নিয়ে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে তারা। শুধু তাই নয়, জল জমা রাস্তায় গামছা মিছিলও করেছে বিজেপি। কালনার বিধায়ক তথা পুরপ্রধান বিশ্বজিৎ কুণ্ডু সমস্যা স্বীকার করে নিয়ে বলেন, “নিকাশি শহরের পুরনো সমস্যা। তবে পূর্ত দফতরের সাথে কথা বলে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যায়ে পুরনো বাসস্ট্যান্ড থেকে বেহুলা নদী পর্যন্ত একটি লম্বা নালা তৈরির কথা চলছে।” এছাড়া পুরসভার উদ্যোগে কয়েকটি ছোট নালাও তৈরি হবে বলে পুরসভা সূত্রে জানা গেছে। বৃহস্পতিবারের বৈঠকে হাজির থাকার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষেরও। তিনি বলেন, “নিকাশি সমস্যা সমাধানে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকরি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
যদিও এর আগে ৬০ লক্ষ টাকা ব্যায়ে একটি ভূগর্ভস্থ নালা তৈরির প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু তা রূপায়িত হয়নি। ফলে এ বারও চাক্ষুষ না দেখে সমস্যা মেটার ভরসা করতে পারছেন না শহরবাসী।