দুর্গাপুরের রাস্তায়। ছবিটি তুলেছেন বিকাশ মশান।
দেখতে সাধারণ রিকশার মতো। তবে অনেক ঝকঝকে ও আরামদায়ক। গতিও অনেক বেশি। ব্যাটারি চালিত নতুন ধরনের এই রিকশাই দুর্গাপুরের পরিবহণ ব্যবস্থায় নতুন সংযোজন। ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দূষণহীন এই যান।
রিকশা চালানোর কাজ শ্রমসাধ্য। ‘কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ’ (সিএসআইআর)-এর এক সমীক্ষায় জানা যায়, রিকশা চালানো শুরু করার চার বছরের মধ্যে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন বহু রিকশাচালক। বর্তমানে দেশে রিকশা চালকের সংখ্যা প্রায় ৮০ লক্ষ। তাঁদের কথা ভেবেই রিকশায় বিকল্প শক্তি বা ব্যাটারি লাগানোর ভাবনা বিজ্ঞানীদের। রিকশায় সৌরশক্তি ব্যবহার করে ইতিমধ্যে চমক দিয়েছে দুর্গাপুরের কেন্দ্রীয় গবেষণা সংস্থা সেন্ট্রাল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিএমইআরআই)। ‘সোলার এনার্জি’ দিয়ে রিকশায় থাকা ব্যাটারি চার্জ হয়। পরে তা দিয়ে মোটর চলে। সেই ধারণা থেকেই গড়া হয়েছে নতুন ধরনের ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলি। তবে এ ক্ষেত্রে সরাসরি বিদ্যুতের সংযোগ থেকে চার্জ করতে হয়।
শহরের নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে নতুন ধরনের এই রিকশাগুলি। রিকশাচালকেরা জানান, এক বার ব্যাটারি চার্জ করলে ৭৫ থেকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত যাওয়া যায়। চার্জের জন্য খরচ পড়ে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা। কাজেই, এই ধরনের রিকশা চালিয়ে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়া সম্ভব। তাছাড়া প্যাডেল করার কোনও পরিশ্রম নেই। ঘণ্টায় প্রায় ১৫ কিলোমিটার বেগে দৌড়তে পারে এই রিকশাগুলি। ফলে, গন্তব্যে পৌঁছাতে সময়ও লাগে কম। নতুন রূপের এই রিকশাগুলি দেখে অনেকে যাত্রীই বেশ কৌতুহলি। স্কুল পড়ুয়া রাজেন বাগ, ঈশানী দে, পঙ্কজ সরকারদের যেন জিজ্ঞাসার শেষ নেই। তারা বলে, “রিকশাও যে এমন হতে পারে, ভাবতেই পারিনি। রিকশায় চড়েছি বলে মনেই হচ্ছে না। যেন কোনও তিন চাকার গাড়িতে দৌড়চ্ছি।”
দূষণে জেরবার দুর্গাপুরের পরিবহণ ব্যবস্থায় সিএনজি চালিত অটো যোগ হয় ২০০৮ সালে। দূষণহীন এই যান বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে দ্রুত। কিন্তু অটো নিজস্ব রুটে চলে। তা ছাড়া রিজার্ভ করলে ভাড়া চড়া। কাজেই, অল্প দূরত্ব যাতায়াতের জন্য অটোয় চড়তে বিশেষ একটা পছন্দ করেন না যাত্রীরা। দুর্গাপুরে আবার রিকশারও তেমন নেই চল। কারণ, চড়াই-উতরাইয়ে ভরা রাস্তা। চড়াইয়ে উঠতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যায় রিকশাচালকদের। সেখানে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলি এসে সুবিধা হয়েছে বলে মনে করছেন বাসিন্দারা। সিটি সেন্টারের নন কোম্পানি এলাকার সুকমল সরকার, ঈশিকা দে-রা যেমন বলেন, “চড়াইয়ে ওঠার সময়ে রিকশা চালককে এত পরিশ্রম করতে হয় যে দেখে খারাপ লাগে। বসে থাকতে লজ্জা হয়। নতুন রিকশাগুলিতে সে সমস্যা নেই।” ব্যাটারি চালিত রিকশার চালক সুনীল রায়, দিলীপ পাসোয়ানরা বলেন, “পরিশ্রম কম। খরচও কম। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছনো যায়। তাই মানুষও আমাদের এই গাড়ি পছন্দ করছেন।”
দুর্গাপুরের ডেপুটি মেয়র অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হাতের কাছে পরিবহণের নানা রকম ব্যবস্থা থাকলে মানুষ বেছে নেওয়ার সুযোগ পান। শহরের মধ্যে অনায়াস যাতায়াতে তা একান্ত প্রয়োজন। নতুন ধরনের রিকশাগুলি শহরবাসীর কাছে সেই সুযোগ বাড়িয়েছে।”