নানা জট কাটিয়ে অবশেষে কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বর্ধমানের পানাগড়ে ২ নম্বর জাতীয় সড়কের বাইপাস তৈরির কাজে বাধা দেওয়া চলছেই।
জাতীয় সড়কের এক দিক থেকে অন্য দিকে যাওয়ার সাবওয়ে গড়ার দাবি তুলে মঙ্গলবার সকালে কাঁকসার থানা রোড এলাকায় কাজে বাধা দেন কিছু স্থানীয় বাসিন্দা। ঘণ্টাখানেক পরে তাঁরা ফিরে গেলে কাজ শুরু হয়। তবে এ ভাবে দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য কাজে বাধা দেওয়া হলে বাইপাস তৈরিতে আরও দেরি হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা নিত্যযাত্রী থেকে ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশেরই। পানাগড় বাজারের ব্যবসায়ী ওমপ্রকাশ সাউ বলেন, “অনেক অপেক্ষার পরে কাজ শুরু হয়েছে। কোনও দাবি থাকলে কাজ বন্ধ না করে আলোচনার মাধ্যমে মিটিয়ে ফেলাই ভাল।”
কেন্দ্রীয় স্বর্ণ চতুষ্টয় রাষ্ট্রীয় সড়ক যোজনায় ২০০১-এই কলকাতা-দিল্লি ২ নম্বর জাতীয় সড়ক চার লেনের করা হয়েছিল। কিন্তু দোকান-বাজার, বাড়ি ভাঙা পড়বে বলে আপত্তি করে পানাগড় বাজার এলাকার কিছু বাসিন্দা বাধা দেওয়ায় প্রায় সওয়া তিন কিলোমিটার রাস্তা দু’লেনের রয়ে গিয়েছে। ফলে, দার্জিলিং মোড় থেকে পানাগড় বাজার পেরিয়ে রেল উড়ালপুল পর্যন্ত রাস্তা কার্যত গলার ফাঁস হয়ে রয়ে গিয়েছে। বেশির ভাগ সময়েই সেখানে যানজট লেগে থাকে।
এই সমস্যা মেটাতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ বছর দশেক আগে বাইপাস তৈরির পরিকল্পনা করেন। দার্জিলিং মোড়ের আগে বায়ুসেনার ছাউনির পাশ থেকে শুরু করে কাঁকসার বেশ কয়েকটি এলাকার উপর দিয়ে গিয়ে সেটি রেল উড়ালপুলের কাছে ফের জাতীয় সড়কে মিশবে। কিন্তু জমির দাম নিয়ে প্রকল্প এলাকার কিছু গ্রামের বাসিন্দারা আপত্তি তোলায় বাইপাস তৈরির কাজও আটকে যায়। সমস্ত জট কাটিয়ে মোটে মাস আটেক আগে কাজ শুরু হয়েছে।
কাঁকসার যে এলাকায় এ দিন বিক্ষোভ হয়েছে সেখানে বাইপাসটি আড়াআড়ি কাঁকসা থানা রোডের উপর দিয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই সেখানে কাজ শুরু হয়েছে। এলাকাবাসীর একাংশের বক্তব্য, এর ফলে থানা রোডের দু’দিকের মধ্যে যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। রাস্তার এক দিকে ব্লক তথা পঞ্চায়েত সমিতির অফিস। অন্য দিকে স্কুল, মূল বাজার, স্টেশন। তা ছাড়া, এক দিকের লোকেদের সহজে পানাগড়-মোরগ্রাম সড়ক যাতায়াত এবং অন্য দিকের লোকের জাতীয় সড়কে যেতে-আসতে ওই থানা রোডই ভরসা। রাস্তা বন্ধ থাকায় তাঁদের ঘুরপথে যেতে হচ্ছে।
এলাকার হিরণ্ময় বন্দ্যোপাধ্যায়, তরুণ দত্ত, শিবাজি মিত্রদের আশঙ্কা, বাইপাস তৈরি হওয়ার পরে ব্যস্ত রাস্তা পেরিয়ে নিয়মিত যাতায়াতে সমস্যা পোহাতে হবে তাঁদের। সেই কারণেই তাঁরা সাবওয়ের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। কিন্তু বাইপাস চালু হয়ে গেলে তো এলাকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতিই পাল্টে যাবে। তার সুফল তো তাঁরাও পাবেন। তা হলে এ ভাবে কাজে বাধা দেওয়া কেন?
এই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। তবে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া বেশ কিছু দোকানদারের বক্তব্য, সাবওয়ে গড়ে দেওয়া হলে বাইপাস নির্মাণ নিয়ে তাঁদের কোনও আপত্তি নেই। তবে এ ভাবে বিক্ষোভ হতে থাকলে কাজের গতি ধাক্কা খাবে জানিয়ে ঠিকাদার সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, “জানি না, এখানে সাবওয়ে তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে কি না।” বারবার চেষ্টা করেও জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের দুর্গাপুরের প্রকল্প আধিকারিক কৃষ্ণ মুরারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।