চুরি হচ্ছে ভরসন্ধ্যায়। পুলিশ যাচ্ছে। তদন্তও হচ্ছে। কিন্তু চুরির কিনারা হওয়ার আগেই ফের হচ্ছে চুরি। সন্ধ্যা নামলেই তাই এখন আতঙ্কে ভুগছেন দুর্গাপুরের গোপালমাঠ এলাকার বাসিন্দারা। দোষীদের গ্রেফতার ছাড়াও অবিলম্বে এলাকায় জোরদার পুলিশি টহল এবং স্থায়ী ফাঁড়ির দাবি তুলেছেন তাঁরা।
দুর্গাপুর পুর এলাকার এক প্রান্তে রয়েছে গোপালমাঠ এলাকা। বাস ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের। এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত ১৫-২০ দিন ধরে এলাকায় দুষ্কৃতীদের উপদ্রব বেড়েছে। বন্ধ বাড়ির তালা ভেঙে ভরসন্ধ্যায় চুরির ঘটনা ঘটছে পরপর। গত কয়েক দিনে এমন মোট ৪টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। দুষ্কৃতীরা নগদ টাকা, গয়না নিয়ে চম্পট দিয়েছে। সব ক’টি চুরির ঘটনাই ঘটেছে রাত ৮টার মধ্যে। এখনও পর্যন্ত বাগানপাড়ায় দু’টি, জগুরবাঁধ হাড়িপাড়ায় একটি এবং মহামায়ানগরে একটি চুরির ঘটনা ঘটেছে।
মহামায়ানগরের ঘটনাটি ঘটে বুধবার সন্ধ্যায়। খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। গিয়েছিলেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব। বাসিন্দারা তাঁকে জানান, বারবার এমন ঘটনায় তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পুলিশি ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। এডিসিপি তাঁদের আশ্বস্ত করেন, অপরাধীদের দ্রুত ধরা হবে। এলাকায় পুলিশি টহল বাড়ানোর আশ্বাসও দেন তিনি।
বাসিন্দারা আরও দাবি তোলেন, এলাকায় একটি স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি তৈরি করা হোক। তাঁদের বক্তব্য, ওয়ারিয়া ফাঁড়ি থেকে পুলিশ আসতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়। গোপালমাঠের জগুরবাঁধ এলাকার বাসিন্দা, পেশায় চিকিৎসক অশোকতরু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একটি ফাঁড়ি হলে সবচেয়ে ভাল হয়। চোখের সামনে পুলিশের উপস্থিতি থাকলে দুষ্কৃতীরা অপরাধ করার আগে অন্তত এক বার ভাববে।” তিনি জানান, দুর্গাপুর শহরের অন্যতম প্রসিদ্ধ এলাকা এই গোপালমাঠ। এত মানুষ বাস করেন। কমিশনারেটের পক্ষ থেকে নতুন নতুন থানা গড়ার পরিকল্পনার কথা জানানো হয়েছে। গোপালমাঠে অন্তত একটি ফাঁড়ি গড়া হোক অবিলম্বে, দাবি তাঁর।
এই এলাকার কাউন্সিলর, পুরসভার মেয়র পারিষদ (পূর্ত) তথা আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় জানান, এই এলাকায় আগে কোনও দিন চুরি-ছিনতাই হত না। কিন্তু ইদানীং পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। মহামায়ানগরে চুরির পরে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন জানিয়ে প্রভাতবাবু বলেন, “ঘটনার তদন্তে আসা পুলিশ আধিকারিকদের কাছে দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছি।” তিনি জানান, পুলিশি তদন্ত সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ছাড়া, দলের তরফে আরজি পার্টি গড়ার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান। তবে কি পুলিশের উপরে আস্থা হারাচ্ছেন তাঁরা? প্রভাতবাবু বলেন, “এটা আস্থা-অনাস্থার প্রশ্ন নয়। পুলিশ পুলিশের কাজ করুক। আমরাও আমাদের তরফে সাধ্য মতো ব্যবস্থা নেব।” তাঁদের কাজে ব্যাঘাত না করে আলাদা ভাবে প্রহরার ব্যবস্থা কেউ করতেই পারেন বলে জানান পুলিশের এক আধিকারিক। তাঁর আশ্বাস, “ফাঁড়ি গড়ার ব্যাপারে বাসিন্দাদের কাছ থেকে লিখিত আর্জি পেলে তা বিবেচনার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।”