এক এসএফআই নেতাকে মারধর করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল ছাত্র সংসদের বিরুদ্ধে। রাজ কলেজের প্রহৃত ওই ছাত্রনেতার অভিযোগ, কেন কলেজে এসএফআইয়ের পোস্টার সাঁটানো হয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তাকে। কলেজের এসএফআই কর্মী ও সমর্থকদের নামের তালিকাও দিতে বলা হয়। তিনি তা দিতে অস্বীকার করায় মারধর করা হয় তাঁকে।
যদিও মারধরের কথা স্বীকার করতে চায়নি টিএমসিপি। তাঁদের দাবি, এক ছাত্রী মোবাইল চুরি গিয়েছে বলে থানায় খবর দিয়েছিল। তাতেই পুলিশ এসে সন্দেহভাজনকে নিয়ে যায়।
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার অন্যান্য দিনের থেকে কিছুটা আগেই কলেজে এসেছিলেন সান্ধ্য শাখার বিকম প্রথম বর্ষের ছাত্র নাসিফ আহমেদ। রাজ কলেজ ইউনিটের এসএফআইয়ের যুগ্ম সম্পাদকও তিনি। অভিযোগ, কলেজের মধ্যে একা পেয়ে নাসিফকে ঘিরে ধরে টিএমসিপি-র ছেলেরা। কেন কলেজে এসএফআইয়ের পোস্টার পড়েছে তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়। তারপরে সেখান থেকে জোর করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ছাত্র সংসদের অফিসে। নাসিফের অভিযোগ, দরজা বন্ধ করে কলেজে কে কে এসএফআই-এর সঙ্গে যুক্ত তাঁদের নাম লিখে দিতে বলা হয়। তিনি রাজি না হওয়ায় মারধর করা হয় তাঁকে। বাধ্য হয়ে ৫-৬ জনের নাম লেখেন তিনি। অভিযোগ, নাম লিখতে সময় নিচ্ছেন বলে আবারও তখন নাসিফকে মারধর করে টিএমসিপি-র ছেলেরা। ইতিমধ্যে পুলিশ এসে যাওয়ায় মোবাইল চুরি করছিল বলে নাসিফকে পুলিশের হাতে তুলে দেয় ওই ছাত্রেরা। আসল ঘটনার কথা বললে শ্লীলতাহানির অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেওয়া হবে বলেও হুমকি দেওয়া হয়। তবে থানায় এনে কিছুক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদের পরে নাসিফকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। পুলিশের কাছে মারধরের অভিযোগও জানান প্রহৃত নাসিফ।
যদিও পুলিশ সরাসরি কলেজে ঢুকে এক ছাত্রকে কী ভাবে থানায় নিয়ে গেল, তা নিয়ে বিস্মিত কলেজের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিজয় চন্দ। তাঁর দাবি, পুলিশ যে কলেজের এক ছাত্রকে ধরে নিয়ে গিয়েছে তা আমাদের জানানো হয়নি। অথচ এমন ক্ষেত্রে আগে অধ্যক্ষকে জানানোই নিয়ম। আমি ঘটনার খোঁজ নিচ্ছি।” তিনি আরও বলেন, “দু’দিন আগে গভীর রাতে এসএফআইয়ের ছেলেরা পোস্টার সাঁটায়। কলেজ বন্ধের পরে ঢোকা অন্যায়। কিন্তু কলেজকে না জানিয়ে এক ছাত্রকে পুলিশ এভাবে নিয়ে গেল বুঝতে পারছি না।” তবে টিএমসিপি-র এক নেতা সায়ন সেনের দাবি, “দিবা বিভাগের এক ছাত্রী মোবাইল চুরি গিয়েছে বলে থানায় খবর দিয়েছিল। সে জন্যই পুলিশ এসে সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে।”
এ দিন কলেজে গিয়ে দেখা যায় পোস্টারগুলি বেশিরভাগই দেওয়াল থেকে ছিঁড়ে তুলে নেওয়া হয়েছে। জিজ্ঞেস করাতে এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক দীপঙ্কর দে বলেন, “সামনে ছাত্র সংসদের নির্বাচন। নির্বাচনে আমরা প্রার্থী দিয়ে লড়তে চাইছি। বিভিন্ন কলেজে প্রচারের চেষ্টাও করছি। কিন্তু টিএমসিপি প্রায় সব জায়গায় আমাদের যারা পোস্টার সাঁটছে তাদের মারধর করছে।” তাঁর দাবি, “ওরা চায় না আমাদের হয়ে কেউ প্রার্থী হোক। নাসিফকে মারধর করে, মোবাইল চোরের বদনাম দিয়ে ওরা প্রমাণ করল কতটা কদর্য হতে পারে টিএমসিপি।”
তবে রাজ কলেজের টিএমসিপি নেতা পিঙ্কু ক্ষেত্রপাল বলেন, “এই কলেজে এসএফআইয়ের অস্তিত্ব বলতে কিছু নেই। ওরা অযথা বিষয়টিতে রং চড়িয়ে নিজেদের প্রচারের আলোতে আনতে চাইছে। আমরা কাউকে মারধর করিনি। পুলিশকেও খবর দিইনি।”