লোকসভা ভোটে রাজ্য জুড়ে জয়ের ধারা ধরে রাখলেও এই এলাকায় দলের ভরাডুবি হয়েছে। সামনে আবার পুরসভার ভোট। লোকসভার নিরিখে এই পুরসভায় বিজেপি-র থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে তারা। তার উপরে স্থানীয় বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় তাঁদের উপরে চাপ যে বেড়েছে, প্রকাশ্যে না হলেও তা মানছেন স্থানীয় তৃণমূল নেতারা।
এই পরিস্থিতিতে আজ, বৃহস্পতিবার আসানসোলে সরকারি সভা ও কর্মসূচিতে যোগ দিতে আসছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারি সভা হলেও পুরভোটে লড়াইয়ের জন্য নেত্রীর কাছ থেকে কিছু বার্তা মিলবে, আশায় রয়েছেন আসানসোলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে মমতা আসানসোলে প্রথম সভা করেন ২০১২ সালের জানুয়ারিতে। সেটিও ছিল সরকারি সভা। সে বার সভা হয়েছিল আসানসোলের পোলো ময়দানে। তবে এ বার প্রশাসনের তরফে সভামঞ্চ তৈরি করা হয়েছে মোটর ভেহিক্যাল দফতরের গাড়ি পরীক্ষার মাঠে, যা পোলো ময়দানের তুলনায় ছোট। বিরোধীদের কটাক্ষ, সারদা, বর্ধমান বিস্ফোরণ-সহ নানা ঘটনায় যে ভাবে রাজ্য সরকারের মুখ পুড়েছে, তাতে বড় মাঠ ভরানো মুশকিল বুঝেই এই মাঠে সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রশাসনের এক কর্তার দাবি, তৃণমূলের নেতারা চেয়েছেন বলেই এই মাঠে সভা করা হচ্ছে। যদিও মহকুমা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই সভাস্থল নির্বাচন করা হয়েছে।
তবে বিরোধীদের এ সব মন্তব্য নিয়ে এখন নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ তৃণমূলের নেতারা। তাঁদের মতে, এই মুহূর্তে এলাকায় দলের যা পরিস্থিতি তাতে দলনেত্রীর আসা খুব জরুরি ছিল। তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) কার্য়করী সভাপতি ভি শিবদাসন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর আসানসোলে সরকারি কর্মসূচিতে আসা আমাদের কাছে বাড়তি অক্সিজেন। তিনি জনকল্যাণে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। আমরা সেগুলি বিভিন্ন এলাকায় প্রচার করব।” তিনি আরও জানান, শুক্রবার দুর্গাপুরে দলের কর্মিসভায় প্রায় ৪৫ হাজার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকবেন। সে দিন দলের বিভিন্ন স্তরে নানা রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে।
তৃণমূলের রাজ্য স্তরের এক নেতা বলেন, “সামনেই আসানসোলে পুরভোট। সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহে দল খানিকটা কোণঠাসা। এর সঙ্গে কেন্দ্রে মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পরে বাবুল সুপ্রিয় এই এলাকায় সাধারণ মানুষের কাছে নানা কর্মসূচি রূপায়ণের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে গিয়েছেন। পুরভোটেও যাতে লোকসভার মতো ফল না হয়, তা নিশ্চিত করতেই দলনেত্রী আসানসোলে একাধিক সরকারি প্রকল্পের কথা ঘোষণা করবেন।” মমতা এলে দলের নিচুতলার কর্মীরা খানিকটা চাঙ্গা হবেন বলেও মনে করছেন নেতারা।
বুধবার, মমতার সভার আগের দিনই আবার আসানসোলে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে গেলেন বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ। এ দিন পুরুলিয়ায় দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়ার পথে আসানসোলে নানা এলাকায় দলের কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। লোকসভা ভোটের পরে পুরভোটেও জয় ধরে রাখতে বুথ স্তর থেকে সর্বশক্তি দিয়ে কাজে নামার পরামর্শ দেন তিনি। রাহুলবাবুর দাবি, “তৃণমূল মারদাঙ্গা করে পুরসভা দখল করতে চাইবে। আমাদের কর্মীদের উপরে হামলা হবে। কিন্তু আমরা লড়াই ছাড়ব না। মানুষ যে ভাবে লোকসভা ভোটে আমাদের পাশে ছিলেন, পুরভোটেও থাকবেন।”