কোথাও রাখা মালপত্র।
কোথাও গজিয়ে উঠেছে ভবঘুরেদের আস্তানা। কোথাও আবার দখল নিয়েছে তেলেভাজা, পান-সিগারেটের দোকান। কোনও জায়গা ভরা জঞ্জালের স্তূপে। আসানসোল ও কুলটি পুরসভা এলাকার নানা বাসস্ট্যান্ডের চিত্র এখন এমনই।
যাত্রীদের অপেক্ষা করার জন্য আসানসোল ও কুলটি পুর কর্তৃপক্ষ নানা রাস্তায় প্রতীক্ষালয় তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সব প্রতীক্ষালয় প্রায় ব্যবহারই করতে পারেন না যাত্রীরা। রোদ-বৃষ্টিতে তাঁদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয় ছাউনির বাইরে খোলা জায়গাতেই। সে নিয়ে ক্ষোভের অন্ত নেই যাত্রীদের মধ্যে। প্রশাসনের আশ্বাস, শীঘ্রই দখলমুক্ত করা হবে প্রতীক্ষালয়গুলি।
আসানসোলের রামবন্ধুতলাও এলাকার একটি প্রতীক্ষালয় দখল করে বসেছে নানা গুমটি। তার একটির মালিক দীনেশ সাউ সাফ জানান, কেউ কিছু বলেনি। তাই সেখানে গুমটি বসিয়ে ব্যবসা করছেন। আসানসোলের রাহা লেন এলাকার একটি প্রতীক্ষালয়ের দখল নিয়েছেন কয়েক জন রিকশা চালক। ছাউনির সামনেই সার দিয়ে রিকশা রেখে চালকেরা ছাউনির তলায় বসে হয় তাস খেলছেন। কেন যাত্রী প্রতীক্ষালয় দখল করে রেখেছেন, তার উত্তরে তাঁদের দাবি, “বাস যাত্রীরা তো এখানে কেউ দাঁড়ান না।” আরও খানিকটা এগোলে গোধূলি রোড এলাকার একটি প্রতীক্ষালয়ে দেখা গেল, রীতিমতো সংসার পেতে বসেছেন কয়েক জন ভবঘুরে। এটি যে যাত্রী সাধারণের অপেক্ষা করার জায়গা, তা জানেন তাঁরা। একই অবস্থা চেলিডাঙা এলআইসি মোড়ের প্রতীক্ষালয়গুলির।
কোথাও চলছে চায়ের দোকান।
কুলটির নিয়ামতপুর বাসস্ট্যান্ডের সব ক’টি প্রতীক্ষালয়েই পসরা সাজিয়ে বসেছেন দোকানদারেরা। কুলটি কলেজ মোড় নিউ রোড রানিতলার প্রতীক্ষালয়গুলিতেও প্রতি সকালে অস্থায়ী দোকান পেতে বসেন কয়েক জন। কেন দখল করে ব্যবসা চালাচ্ছেন, সে প্রশ্নের জবাব দেন না কেউই।
সরকারি অর্থ ব্যয়ে তৈরি প্রতীক্ষালয়গুলি যে তাঁরা ব্যবহার করতে পারছেন না, সে ব্যাপারে প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই বলে অভিযোগ যাত্রীদের। আসানসোলের বাসিন্দা রূপা দত্ত বলেন, “বৃষ্টি বা রোদে একটু যে প্রতীক্ষালয়ের ছায়ায় দাঁড়াব, তার উপায় নেই। দোকানে দোকানে ছয়লাপ।” কুলটির দশম শ্রেণির ছাত্রী আত্রেয়ী সেন বলে, “স্কুলে যাওয়ার জন্য বাস ধরতে হয়। কিন্তু প্রতীক্ষালয়ে দাঁড়ানোর উপায় নেই।”
সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন আসানসোল পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “আমি মেয়র থাকাকালীন অনেক বার শহরের যাত্রী প্রতীক্ষালয়গুলি দখলমুক্ত করেছি। কিন্তু তা আবার দখল হয়ে যাচ্ছে।” তাঁর আশ্বাস, ফের অভিযান চালিয়ে সেগুলি দখলমুক্ত করা হবে। আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানান, যাত্রীরা যাতে এই পরিষেবা থেকে বঞ্চিত না হন, তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ছবি: শৈলেন সরকার।