চারটি থানা এলাকায় আগুন নেভানোর দায়িত্বে রয়েছে একটি মাত্র দমকল কেন্দ্র। এর ফলে বিস্তীর্ণ এলাকার কোথাও আগুন লাগলে দমকল পৌঁছানোর আগেই সব পুড়ে শেষ হয়ে যায়। এই সমস্যা দূর করতে স্থানীয় বাসিন্দারা নতুন করে আরও একটি দমকল কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি তুলেছেন।
গলসী ১, ২ নম্বর ব্লক এবং আউশগ্রাম ১, ২ নম্বর ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় বহু ছোট-বড় গ্রামের পাশাপাশি রয়েছে মানকর, বুদবুদ, গুসকরা, ভেদিয়া, মোরবাঁধ, অভিরামপুরের মতো জনবহুল এলাকাও। ওইসব অঞ্চলে কোথাও আগুন লাগলে ভরসা বলতে একমাত্র পানাগড়ের অগ্নি নির্বাপণ কেন্দ্র। কিন্তু সেখান থেকে দমকলের গাড়ি পৌঁছানোর আগেই সব পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পানাগড় দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, মাস তিনেক আগে এমন একটি ঘটনার সম্মুখীন হতে হয় দমকল কর্মীদের।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, পানাগড় দমকল কেন্দ্রকে কাঁকসা থানার পাশাপাশি বুদবুদ, আউশগ্রাম ও গলসী থানার একটা অংশের পাশাপাশি যেতে হয় আউশগ্রাম থানার মোরবাঁধ, ভেদিয়া প্রভৃতি এলাকাতেও। পানাগড় থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মোরবাঁধ এলাকা। ওই এলাকার একটি গ্রামে, কুনুর নদীর পাড়ে এক ব্যক্তির খামারে একটি খড়ের পলুইয়ে আগুন লাগার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রওনা দেয় দমকলের গাড়ি। কিন্তু দূরত্বের জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর আগেই, জোরে হাওয়া দেওয়ায় আরও বেশ কয়েকটি পলুইয়ে আগুন লেগে যায়। এক দমকল কর্মী জানান, দূরত্বের কারণেই ক্ষতি এড়ানো যায় না। আউশগ্রামের বাসিন্দা উদয় বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এলাকার বেশিরভাগ মানুষই কৃষিজীবী। কাজেই ধানের মরসুমে খামারে গোলা ভর্তি ধান থাকে। কোনও কারণে আগুন লেগে গেলে সব শেষ হয়ে যায়। আউসগ্রাম ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সৈয়দ হায়দার আলি জানান, আউশগ্রাম থানার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বড় বড় এলাকায়। রয়েছে গুসকরার মতো পুর এলাকাও। তিনি বলেন, “এই এলাকার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে একটি দমকল কেন্দ্রে গড়ে তোলার দাবি জানানো হবে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দমকল আধিকারিক জানান, পানাগড় থেকে ভেদিয়াতে পৌঁছতে প্রায় ঘন্টা দু’য়েক সময় লাগে। আবার গুসকরাতে আগুন লাগলেও পানাগড়, ভাতার বা বর্ধমান থেকে দমকলের গাড়ি যেতে হয়। ওই আধিকারিক মনে করেন, আরও দমকল কেন্দ্র তৈরি হলে পানাগড়ের উপর চাপ কমবে।
দমকল সূত্রে জানা গিয়েছে, গুসকরায় একটি কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা বেশ বছর কয়েক ধরে চললেও এখনও পর্যন্ত তা গড়ে ওঠেনি। বুদবুদের মানকরে একটি দমকল কেন্দ্র গড়ে তোলার আর্জি জানিয়ে মানকর গ্রামের বাসিন্দারা রাজ্যের দমকল মন্ত্রীকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন। বাসিন্দাদের দাবি, বিভিন্ন এলাকা থেকে মানকরের যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত ভাল। তাছাড়া দমকল কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় জলের যোগান মেটাতে পারে এমন জলাশয়ও রয়েছে মানকরে। মানকরের বাসিন্দা সুকুমার পাল জানান, পানাগড়ের দমকলকে ওইসব এলাকায় আসতে হলে জিটি রোড ধরে রেললাইন পার করে আসতে হয়। রেলগেট বন্ধ থাকলে দমকলের গাড়িও আটকে পড়ে। এমন জায়গায় দমকল কেন্দ্র গড়া দরকার যাতে খুব সহজেই বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছানো যাবে। আগুন লাগলে সবথেকে সমস্যায় পড়েন আউশগ্রামের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের। ওই এলাকাতেও দমকল কেন্দ্র গড়ে তোলা যেতে পারে মনে করছেন বাসিন্দারা। এ প্রসঙ্গে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ অনুপম হাজরা জানান, এলাকার মানুষ সমস্যার কথা তাঁর কাছে জানালে তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করবেন।