এই নির্মাণ ঘিরেই উঠছে প্রশ্ন।
জলাভূমি হিসাবে নথিভুক্ত জায়গা দখল করে শৌচাগার তৈরি করছে পুরসভা। এমনই অভিযোগ তুলেছেন দুর্গাপুরের সিটি সেন্টারে বেঙ্গল অম্বুজা এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় ঊর্বশী রেসিডেন্টস্ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ওই নির্মাণ বন্ধের দাবি জানিয়ে পুরসভাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদিও পুরসভার পাল্টা দাবি, বাসিন্দাদের দাবি করেছিলেন বলেই ওই শৌচাগার তৈরি করার কাজ শুরু হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিটি সেন্টারের ঊর্বশী আবাসন প্রকল্পের মধ্যে শ্রী ও ছায়া নামে দু’টি আবাসন মিলিয়ে প্রায় ১৩০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। ২০০৩ সাল থেকে বাসিন্দারা ওই আবাসন দু’টিতে বসবাস করছেন। আবাসন সংলগ্ন এলাকায় নিচু জায়গায় বৃষ্টির জল জমা হতো। বাসিন্দাদের দাবি, ওই জমিটি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে জলাভূমি হিসাবে নথিভুক্ত রয়েছে। কিন্তু সেই জমির একাংশ দখল করে শৌচাগার নির্মাণের কাজ করছে পুরসভা।
ঊর্বশী রেসিডেন্টস্ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোয়িয়েশনের সদস্য সৌরেন্দ্রনাথ মণ্ডলের দাবি, তাঁরা যখন ফ্ল্যাট কিনেছিলেন তখন বিভিন্ন নথিতে সংলগ্ন জমিকে জলাভূমি বলেই উল্লেখ করা হয়েছিল। আবাসনের বাসিন্দারা জানান, বর্ষায় বৃষ্টির জল ওই নিচু জলাভূমিতে গিয়ে জমে। তাঁদের আশঙ্কা, ওই জমির একাংশ দখল হয়ে যাওয়ায় এ বার বৃষ্টির জল জমে এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়বে। আবাসনের নিকাশি ব্যবস্থা বেহাল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও করছেন তাঁরা। ওই জমিতে সাধারণের জন্য শৌচাগার তৈরির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কারণ যে জায়গায় শৌচাগারটি বানানো হচ্ছে সেটি রাস্তা থেকে অনেক ভিতরে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্থানীয় বাসিন্দার দাবি, “ওই এলাকায় তৃণমূলের একটি দলীয় কার্যালয় রয়েছে। বকলমে তৃণমূল কর্মীদের জন্যই ওই শৌচাগারটি তৈরি করছে পুরসভা। কিন্তু সেটি সাধারণ মানুষের কোনও কাজেই লাগবে না।” তাঁর আরও দাবি, ওই নির্মাণের প্রতিবাদ করার জন্য তাঁদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে ২২ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদক পরিমল অগস্তি বলেন, “ওখানে তৃণমূলের কোনও পার্টি অফিস নেই। দুর্গাপুজো হয়। আরও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও বাইরের লোকের আসা যাওয়া লেগেই থাকে। তাই এই শৌচাগার তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।” জেলা মত্স্য দফতরের এক কর্তা জানান, দিন দিন বেআইনি নির্মাণ বাড়তে থাকায় এলাকায় জলাভূমির সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। তাই পুরসভা জলাভূমি বোঝানোর কাজ করে থাকলে সেটি মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। যদিও এখনও পর্যন্ত বেআইনি নির্মাণে রাশ টানতে না পারায় জলাভূমির সংখ্যা আগের থেকে অনেক কমে গিয়েছে। যদিও এখনও অবধি ঊর্বশী আবাসনের বাসিন্দারা মত্স্য দফতরে কোনও অভিযোগ জানাননি।
পুরসভার এক কর্তার দাবি, ওই এলাকার বাসিন্দারাই দীর্ঘদিন ধরেই শৌচাগার তৈরি করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিলেন। সেই দাবি মেনে এডিডিএকে জানিয়ে ওই জমিতে শৌচাগারের নির্মাণ শুরু হয়েছে। যেখানে শৌচাগার তৈরি হচ্ছে সেটির পাশে জলাভূমি থাকলেও তার খুব সামান্য অংশই শৌচাগার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়েছে। দুর্গাপুর পুরসভার মেয়র অপূর্ব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি মেনেই শৌচাগার তৈরি শুরু হয়েছিল। এখন তারাই আপত্তি করছেন! সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”