স্কুলে মাত্র চার জন শিক্ষক। করণিক নেই। কিন্তু স্কুল তো চালাচে হবে। তাই কোনও রকমে ক্লাস সামাল দেওয়ার পাশাপাশি করণিকের কাজও চালাচ্ছেন চার জনই। গলসি ১ ব্লকের ভরতপুর জুনিয়র হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা পূর্ণিমা মণ্ডল জানান, সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পঠন-পাঠনের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। পড়ুয়া সংখ্যা ২৩০। স্কুলে এখন তিন জন শিক্ষক এবং এক জন শিক্ষিকা রয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের পদ ফাঁকা। ফাঁকা আরও দুই শিক্ষকের পদ। সব শ্রেণিতেই ৬টি করে পিরিয়ড। তা সামলাতে হিমশিম খান চার শিক্ষক-শিক্ষিকা। তাঁরা জানান, এই স্কুলে আসা পড়ুয়াদের অধিকাংশই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। ফলে তাদের দিকে বাড়তি নজর দেওয়া উচিত। শিক্ষকেরা প্রয়োজন পড়লে ছুটি নিতে পারেন না। কারণ, তাহলেই ক্লাস ফাঁকা যাবে। এর বাইরে করণিকের যাবতীয় কাজকর্ম দেখতে হয় তাঁদেরই। স্কুলে ভর্তির প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে ফি জমা নেওয়া, খরচপত্র সামলানো, রক্ষণাবেক্ষণ, কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী প্রকল্পের কাজকর্ম, নিজেদের প্রভিডেন্ড ফান্ড সংক্রান্ত ফাইল সবই দেখভাল করতে হয় তাঁদের চার জনকেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক জানান, এ ভাবে দিনের পর দিন চালানো মুশকিল। সব সামলাতে গিয়ে অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। এক অভিভাবক বলেন, “আমার ছেলে পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। ওর কাছে শুনেছি, এক জন শিক্ষক কোনও কারণে না এলে সে দিন সব ক্লাস হয় না।” তিনি জানান, কাছাকাছি স্কুল বলতে কিলোমিটার তিনেক দূরে শালডাঙা হাইস্কুল ও সিলামপুর হাইস্কুল। এত দূরে ছেলেমেয়েদের পাঠাতে তাঁরা ভরসা পান না। তাই ভরতপুর জুনিয়র স্কুলে পাঠাতে হয়। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা পূর্ণিমাদেবী বলেন, “ফাঁকা পদগুলি পূরণ হলে সমস্যা মিটবে। পড়ুয়াদের আরও যন্ত নিয়ে পড়ানো যাবে।”
অভিভাবকেরা জানান, নবম শ্রেণিতে ছেলেমেয়েদের শালডাঙা বা সিলামপুর যে কোনও একটি স্কুলে পাঠাতে হয়। যদি ভরতপুর স্কুলকে মাধ্যমিকে উন্নীত করা যায়, সমস্যা মেটে। সিলামপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার পালও বলেন, “ওই স্কুল মাধ্যমিক হলে সেখানকার পড়ুয়ারা যেমন উপকৃত হবে, আমাদের স্কুলেও চাপ কমবে।” তিনি জানান, এখন তাঁদের স্কুলে পড়ুয়া প্রায় ১৪০০। আশপাশের স্কুলগুলি মাধ্যমিক স্তরের। ফলে, একাদশ শ্রেণিতে পড়ুয়া বাড়ে। কিন্তু ভরতপুর স্কুলটি মাধ্যমিকে উন্নীত হলে নবম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়া সংখ্যা কিছুটা কমবে। গলসির বিধায়ক, পেশায় শিক্ষক গৌর মণ্ডল বলেন, “সংশ্লিষ্ট দফতরে যোগাযোগ করে ভরতপুর স্কুলের সমস্যার দ্রুত সুরাহা করার চেষ্টা করব।”