কাকভোরে প্রচারে স্টেশনে হাজির প্রার্থী

সকাল সকাল ঈশ্বর-দর্শন। বুধবার কালনা স্টেশনে তড়িঘড়ি ট্রেনে ওঠার সময়ে মুচকি হেসে বলছিলেন বেশ কিছু যাত্রী। কেউ বেরোন ভোর ৫টা। কেউ বা সকাল ৬টা। ফিরতে ফিরতে রাত। বাড়ি গিয়ে দেখা মেলে না তাঁদের। তাই এ দিন ভোরে তাঁদের সঙ্গে পরিচয় করতে স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলেন বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাস। আর তাঁকে দেখেই এমন মন্তব্য কয়েক জন রসিক যাত্রীর।

Advertisement

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

কালনা শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০১৪ ০০:২১
Share:

অম্বিকা কালনা স্টেশনে প্রচারে ব্যস্ত সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাস। —নিজস্ব চিত্র।

সকাল সকাল ঈশ্বর-দর্শন।

Advertisement

বুধবার কালনা স্টেশনে তড়িঘড়ি ট্রেনে ওঠার সময়ে মুচকি হেসে বলছিলেন বেশ কিছু যাত্রী। কেউ বেরোন ভোর ৫টা। কেউ বা সকাল ৬টা। ফিরতে ফিরতে রাত। বাড়ি গিয়ে দেখা মেলে না তাঁদের। তাই এ দিন ভোরে তাঁদের সঙ্গে পরিচয় করতে স্টেশনে পৌঁছে গিয়েছিলেন বর্ধমান পূর্ব কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী ঈশ্বরচন্দ্র দাস। আর তাঁকে দেখেই এমন মন্তব্য কয়েক জন রসিক যাত্রীর।

ভোরের আলো তখনও ঠিক মতো ফোটেনি। কাটোয়া-হাওড়া লোকাল ধরার জন্য হুড়োহুড়ি কালনা স্টেশনে। দলের কালনা জোনাল অফিস থেকে পায়ে হেঁটে সেখানে হাজির হলেন সিপিএমের প্রার্থী। পরনে ছাই রঙের ট্রাউজার্স ও সাদা জামা। সঙ্গে পতাকা হাতে জনা কুড়ি কর্মী। করজোড়ে যাত্রীদের দিকে নিজেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্রবাবু। নিজের পরিচয় দিয়ে জানাচ্ছিলেন ভোট দেওয়ার আর্জি। সকালে এ ভাবে স্টেশনে প্রার্থীকে দেখে অবাক অনেকেই।

Advertisement

নির্মাণ শ্রমিক রশিদ শেখের সঙ্গে ঈশ্বরচন্দ্রবাবুর পরিচয় করিয়ে দেন সিপিএম কর্মীরা। রশিদ বলেন, “সকালে প্রার্থীকে দেখে হকচকিয়ে গিয়েছিলাম। কিছু বোঝার আগে উনি বললেন, ভোটে আমাকে দেখবেন।” ট্রেন ধরতে প্ল্যাটফর্মে বসেছিলেন জ্যোতির্ময় গোস্বামী। তাঁর কাছে গিয়ে আলাপ করেন প্রার্থী। জ্যোতির্ময়বাবু জানান, সারা বছর ব্যবসার কাজে কাকভোরে নবদ্বীপ-হুগলি ছুটতে হয়। সারা দিন বাইরে কেটে যাওয়ায় ভোটের প্রার্থীদের সঙ্গে সাক্ষাতের খুব একটা সুযোগ মেলে না। এখানে সিপিএম প্রার্থী নিজেই এসে পরিচয় করলেন। ব্যাপারটা বেশ নতুন লাগল।”

ঘণ্টা দেড়েক যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ সারার পরে সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ স্টেশন চত্বরে চা, ঘুগনি, পরোটার দোকানে ঘোরেন সিপিএম প্রার্থী। সেখানে তখন এলাকার লোকজন চা খেতে এসে আড্ডা জমিয়েছেন। তাঁদের সঙ্গেও হাত মেলান ঈশ্বরচন্দ্রবাবু। সেখান থেকে কর্মীদের নিয়ে কালনা নতুন বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে যান তিনি। আলাপ করেন যাত্রীদের সঙ্গে। প্রার্থীকে দেখে কালনার কামারতলা এলাকার এক যুবক বলেন, “আপনিই ঈশ্বর। সকালে আপনার দেখা পেয়ে খুব খুশি হলাম।” শুনে মুচকি হাসেন প্রার্থী।

এ দিন প্রার্থীর সঙ্গে প্রচারে বেরিয়েছিলেন সিপিএমের কালনা জোনাল সদস্য স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পেশার তাগিদে সকালে বাড়ি থেকে বাইরে যাওয়া মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়। বাড়ি বাড়ি প্রচারে গিয়ে তাঁদের দেখা মেলে না। কারণ, তাঁরা ফেরেন রাতে। তাঁদের কাছে পৌঁছনোর জন্যই এমন উদ্যোগ।”

সকালে প্রার্থীর প্রচারে বেরোনো অবশ্য এই কেন্দ্রে এ দিনই প্রথম নয়। দু’দিন আগেই সকালে কালনার চকবাজারে হাজির হয়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী সুনীল মণ্ডল। ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ জমানোর পাশাপাশি ভিড়ে ঠাসা বাজারে গলায় হাত মাইক ঝুলিয়ে ‘সোনার বাংলা’ গড়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। ভোটের পরে প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য তাঁর দেখা মিলবে কি না, এক ব্যবসায়ীর এই প্রশ্ন শুনে ‘উন্নয়নের জোয়ার’ বইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন সুনীলবাবু।

তবে এ দিন সিপিএমের স্টেশন-বাসস্ট্যান্ডে প্রচারকে তৃণমূল ‘গিমিক’ আখ্যা দিয়েছে। এ দিন যখন স্টেশনে সিপিএমের প্রচার চলছে, ট্রেন ধরার জন্য সেখানে হাজির ছিলেন শহর তৃণমূলের নেতা পেশায় রেলকর্মী গোড়া পাঠক। তাঁর দাবি, “বেশ কিছু ক্ষণ ধরে দূর থেকে ওদের প্রচার লক্ষ করি। প্রার্থীর সঙ্গে লোকজন তো বিশেষ ছিল না। আসলে সিপিএমের সঙ্গে কোনও লোকজন যেতে ভরসাই পাচ্ছে না। এই ধরনের চেষ্টা হুজুগ ছাড়া আর কিছু নয়।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement