ডিহিকার জলপ্রকল্প। নিজস্ব চিত্র।
ভোটে দলের হারের পিছনে অন্যতম কারণ জলকষ্ট নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভ। সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ের পরে মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিয়ে এমনটাই দাবি করেছিলেন আসানসোলের তৃণমূল নেতা মলয় ঘটক। প্রতিবাদ এসেছিল দলের ভিতর থেকেই। শহরের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, যে সব এলাকায় জলকষ্ট নেই, ভোটে সেখানেও তবে দল পিছিয়ে পড়ল কেন।
তৃণমূলের হারের পিছনে শহরের জল সমস্যার হাত রয়েছে কি না, তা দলের অন্দরের তর্কের বিষয়। তবে সেই কষ্ট মেটাতে যে প্রকল্পের অনুমোদন মিলেছিল, তা শেষ করতে না পারা নিয়ে সরব হয়েছে বিরোধীরাও। তা শেষ করা গেলেই শহরের মানুষের ভোগান্তি ঘুচবে বলেও তাদের দাবি। আট বছরেও কেন প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হল না, প্রশ্ন উঠেছে সে নিয়েই।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, নগরোন্নয়ন মন্ত্রক প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় ২০০৬ সালে। ২০০৯-এ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। জেএনএনইউআরএম প্রকল্পের আওতায় তৈরির কথা হয় এই প্রকল্পটি। নাম দেওয়া ডিহিকা জলপ্রকল্প। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিহিকা গ্রামের কাছে দামোদরের পাড়ে এই প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছে। সেখানে নদীগর্ভ থেকে জল তুলে পাইপলাইনে করে প্রথমে শহরের বিভিন্ন এলাকায় গড়া জলাধারে পাঠানো হবে। এর পরে সেখান থেকে জল শহরের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করা হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটির জন্য নতুন আটটি উচ্চ-জলাধার নির্মাণ করা হয়েছে। হিরাপুর, শ্যামবাধ, আসানসোল স্টেডিয়াম, কুমারপুর, কারবালা, ধাদকা, বকবাধি ও মহিশীলা এলাকায় সেগুলি তৈরি হয়েছে। ডিহিকা থেকে জলাধারগুলিতে জল পাঠাতে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো হচ্ছে। জলাধারগুলি থেকে শহরের নানা এলাকায় জল পৌঁছতে আরও প্রায় ২৫০ কিলোমিটার পাইপ বিছানো হবে। নাগরিকেরা আবেদন করলে বাড়িতেও জলের সংযোগ দেওয়া হবে। যে সব এলাকায় বাড়িতে সংযোগ দেওয়া যাবে না, সেখানে রাস্তার পাশে কল বসানো হবে। এই প্রকল্পটি থেকে প্রতি দিন এক কোটি গ্যালন জল সরবরাহ করা হবে। জনসংখ্যার নিরিখে প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২৫ বছর।
এখনও পর্যন্ত কতটা কাজ এগিয়েছে প্রকল্পের? মেয়র তাপসবাবুর দাবি, “ডিহিকা জলপ্রকল্প উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।” কিন্তু পুরসভার একটি সূত্রে জানা যায়, আটটি জলাধারের মধ্যে হিরাপুর, মহিশীলা ও শ্যামবাধশুধু এই তিনটি চালু করা সম্ভব হয়েছে। তবে তাতে সব এলাকায় পর্যাপ্ত জল সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বাকি পাঁচটি জলাধার কবে নাগাদ চালু হবে তা নিশ্চিত ভাবে জানাতে পারেননি পুরসভার জল দফতরের মেয়র পারিষদ রবিউল ইসলাম। ফলে, আসানসোল পুর এলাকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনও নির্জলা থেকে যাচ্ছে। রবিউল ইসলাম স্বীকার করেন, “সব এলাকায় সত্যি এখনও জল দিতে পারিনি আমরা।”
জল দফতরের মেয়র পারিষদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৩১ থেকে ৩৩ এবং ৪৮ থেকে ৫০ নম্বর ওয়ার্ড, রেলপাড় এলাকার একাধিক ওয়ার্ড, ধাদকা, ডিপোপাড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল, হিরাপুরের একাধিক অঞ্চলে এখনও পানীয় জল পৌঁছে দিতে পারেনি পুরসভা। কিন্তু এলাকা ঘুরে বোঝা গিয়েছে, অন্তত ২০টি ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এখনও জলসঙ্কটের কবলে।