অমল হালদার ও অচিন্ত্য মল্লিক (ডান দিকে)।—নিজস্ব চিত্র।
উঁচুতলার পরামর্শ মতো কমিটি ছোট করা হলেও জেলা সম্পাদক পদে প্রবীণ নেতাকেই বেছে নিল বর্ধমানের সিপিএম। এক সময়ের দুর্গে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে সেনাপতি বাছা হল কৃষক নেতা অচিন্ত্য মল্লিককে।
তিন বারের সময়সীমা শেষ হওয়ায় জেলা সম্পাদক পদ থেকে অমল হালদারকে সরতে হচ্ছে, তা জানাই ছিল। তার জায়গায় কে আসবেন, সে নিয়ে জল্পনা চলছিল দলের মধ্যেই। সিপিএমের উঁচুতলা ইদানীং বারবার নেতৃত্বে তরুণ মুখ নিয়ে আসার উপরে জোর দিয়েছেন। বর্ধমান জেলা সিপিএমও সেই পথে চলে কি না, সে নিয়ে কৌতূহল ছিল দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। দল অবশ্য শেষ পর্যন্ত ভরসা করেছে বছর তেষট্টির অচিন্ত্যবাবুর উপরেই।
রবিবার বার্নপুরে শেষ হল সিপিএমের ২৩তম জেলা সম্মেলন। গত বার জেলা কমিটি ছিল ৮১ জনের। এ বার ৭০ জনের কমিটি গঠন হয়েছে। তার মধ্যে সাত জন নতুন মুখ। গোটা জেলা থেকে প্রায় ৫৪৪ জন প্রতিনিধি এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। আড়াই দিন ধরে ৬০ জনেরও বেশি প্রতিনিধি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। রবিবার দুপুরে সম্মেলনের শেষ পর্বে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করেন বিদায়ী সম্পাদক অমল হালদার। সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয় সেই কমিটি। এর পরে নতুন জেলা সম্পাদক হিসেবে অচিন্ত্য মল্লিকের নাম ঘোষণা করেন অমলবাবু। সর্বসম্মতিতে তা গৃহীত হয়।
সিপিএম সূত্রে জানা গিয়েছে, সত্তরের দশকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ পান কাটোয়ার গোয়ালপাড়ার বাসিন্দা অচিন্ত্যবাবু। প্রথম থেকেই তিনি দলের কৃষক ফ্রন্টে কাজ করেছেন। আটের দশকে অচিন্ত্যবাবু যুব ফেডারেশনের বর্ধমান জেলা সম্পাদক হন। সেই সময়ে সংগঠনের কাজে জেলার নানা প্রান্ত চষে বেড়িয়েছেন তিনি। স্বভাবতই তিনি জেলায় দলের পরিচিত মুখ। ১৯৯২-এ কাটোয়া জোনাল সম্পাদক, ১৯৯৯-এ জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হন। ২০১১ সালে রাজ্য কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য হন।
রবিবার জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পরে অচিন্ত্যবাবু জানান, কৃষি এলাকার পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলেও সংগঠনকে শক্তিশালী করতে একাধিক পদক্ষেপ করবেন। তাঁর অভিযোগ, “গত সাড়ে তিন বছরে এখানে একটিও নতুন শিল্প গড়ে ওঠেনি। উপরন্তু, তৃণমূলের তোলাবাজিতে শিল্প কারখানাগুলি ধুঁকতে শুরু করেছে। একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পও বন্ধ। অথচ, সেগুলি বাঁচিয়ে তোলার জন্য রাজ্য সরকার কোনও পদক্ষেপ করছে না।” এ সব নিয়ে তাঁদের নতুন জেলা কমিটি লাগাতার আন্দোলনে নামবে বলে দাবি করেন তিনি।
বিদায়ী সম্পাদক অমল হালদার জানান, ৭০ বছর বয়সের কোঠায় পৌঁছে গিয়েছেন, এ রকম কয়েক জন সদস্যকে জেলা কমিটি থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। কয়েক জনকে নিষ্ক্রিয়তার কারণে বাদ দেওয়া হয়েছে। নতুন কমিটিতে মহিলা সদস্য মাত্র পাঁচ জন। আরও বেশি মহিলা সদস্য তুলে আনা যাচ্ছে না কেন? অমলবাবুর উত্তর, “পরবর্তী কালে আরও বেশি সংখ্যক মহিলা সদস্য আনার পথ খোলা রাখা আছে।”
সম্মেলনের শেষ দিনে বক্তব্য রাখতে এসেছিলেন শ্রমিক নেতা শ্যামল চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, আসানসোল-দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে কারখানাগুলির বেহাল দশায় প্রায় আড়াই লক্ষ শ্রমিক-কর্মী কাজ হারিয়েছেন। এই এলাকায় এ নিয়ে আন্দোলনে নামা হবে।