গিয়াসউদ্দিন দালাল।
ইংরেজিতে ‘ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু’ গাইছেন জর্জ বিশ্বাস। দাঁড়িয়ে শুনছেন এক নজরুল ভক্ত তরুণ।
সে দিনই সেই তরুণ গিয়াসুদ্দিন দালাল ভেবেছিলেন, তাঁর অঞ্চলের কবি নজরুলকেও যদি ইংরেজিতে প্রকাশ করা যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পাঠ শেষে ১৯৮০ সালে শিক্ষকতায় যোগদান। তারপর ২০০৬-এ নজরুলের জন্মভিটে চুরুলিয়ার একটি স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান। তখন থেকেই নজরুলের বেশ কিছু প্রতিনিধি স্থানীয় লেখার ইংরেজি অনুবাদে হাত দিলেন গিয়াসবাবু।
বাংলাদেশের নজরুল ইন্সটিউট থেকে ১৯৯৭ সাল নাগাদ মহম্মদ নুরুল হুদা’র সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় নজরুলের কবিতার ইংরেজি অনুবাদ। সুব্রত দাস অনুবাদ করেন কয়েকটি গদ্য। কিন্তু এ পার বাংলা থেকে নজরুলের রচনার কয়েকটি বিক্ষিপ্ত অনুবাদ হলেও সামগ্রিকভাবে প্রায় কিছুই হয় নি। এ যাবৎ পশ্চিমবঙ্গ থেকে ইংরেজিতে প্রকাশিত নজরুলের জীবনীর সংখ্যা দু’টি- গোপাল হালদার এবং প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপিকা বসুধা চক্রবর্তীর লেখা। নজরুল চর্চার এই জমিতে দাঁড়িয়েই গিয়াসবাবুর হাতে ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান’-এর রূপান্তর ঘটল ‘ইন ওয়ান স্টেম উই আর টু বাড্স হিন্দুস অ্যাণ্ড মুসলিমস’-এ।
নজরুলের বেশকিছু কবিতা, গান, ছোটগল্প, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটিকা, ছড়া ও অভিভাষণ অনুবাদ করছেন গিয়াসবাবু। ইতিমধ্যে প্রথম খণ্ডও ছাপা হয়ে গিয়েছে। সেখানে রয়েছে একশটি কবিতা, গান এবং ‘মৃত্যুক্ষুধা’ উপন্যাসটি। গিয়াসুদ্দিনবাবু বলেন, “এই প্রথম উপন্যাসটির ইংরাজি অনুবাদ হল।” শুধু অনুবাদই নয়, কবিতা ও গানের ইংরেজি অনুবাদ অডিও সিডির মাধ্যমেও প্রকাশ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান গিয়াসবাবু। ফেসবুক, ইউটিউবের মত সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেও সিডি ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে জানা গিয়েছে। গিয়াসবাবুর কাজে সর্বদা সাহায্য করেছেন বিশিষ্ট নজরুল গবেষক অধ্যাপক বাঁধন সেনগুপ্ত। তাঁর কথায়, “এই রকম উদ্যোগ এ পার বাংলার নজরুল চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।”
সরকারি সাহায্যের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে নজরুল অ্যাকাডেমি সমস্ত জায়গাতেই ই-মেইল করেছিলেন গিয়াসবাবু। কিন্তু সাড়া মেলেনি কোনও জায়গা থেকেই। যদিও ২০০৮ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে গিয়াসবাবু অনুবাদের নমুনা পাঠিয়েছিলেন। বুদ্ধবাবু জানান, অবাঙালীদের জন্য এই অনুবাদ নজরুলকে জানার সুযোগ করে দেবে।
নজরুল চর্চাকে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় করতে একদা আকাশবাণীর সঞ্চালক গিয়াসবাবু কলকাতার জীবনানন্দ সভাঘরে বাঁধন সেনগুপ্ত, মিরাতুন নাহার এবং বাচিক শিল্পী প্রদীপ ঘোষকে নিয়ে ওয়ার্কশপও করেছেন। গঠন করেছেন ‘নজরুল ওয়ার্ল্ডওয়াইড’ নামে এক ফোরামও। এখন দেখার প্রয়াণ দিবসের প্রাক্কালে আবার নতুন করে জোয়ার আসে কিনা নজরুল চর্চায়।