মিঠু মাঝি— নিজস্ব চিত্র।
ইস্তফার আঁচ এ বার পূর্ব বর্ধমান জেলাপরিষদে। নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ এবং ত্রাণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ মিঠু মাঝি বুধবার জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে পদত্যাগ করবেন তিনি। তবে মিঠু বলেছেন, ‘‘জেলা পরিষদের পদ থেকে ইস্তফা দিলেও আমি তৃণমূল ছাড়ছি না।’’
মিঠুর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অপমানিত হচ্ছেন। তাঁকে না জানিয়েই দফতরের বিভিন্ন কাজ করা হচ্ছে। তাই বাধ্য হয়েই তিনি এই কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘পরপর দু’বার জেলাপরিষদের জামালপুর আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছি। এর আগে বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে কাজ করেছি। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেতার পর নারী, শিশু এবং সমাজকল্যাণ দফতরের কর্মাধ্যক্ষ করা হয়েছিল। দেওয়া হয় ত্রাণ দফতরও। কিন্তু দেখছি আমাকে কোনও কিছু না জানিয়েই জেলা পরিষদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এমনকী, আমার দফতরের অধীন যে সমস্ত বিষয়, সে সম্পর্কেও কিছু জানানো হচ্ছে না! সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর জানতে পারছি।’’
মিঠুর অভিযোগ, গত বছর তাঁকে না জানিয়েই গলসিতে সবলা মেলা আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ বছর সবলা মেলা করা হচ্ছে মেমারির সাতগেছিয়ায়। কিন্তু এ বিষয়েও তাঁকে আগাম কিছু জানানো হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘এ ভাবে দিনের পর দিন তিনি উপেক্ষার পাত্রী হয়ে থাকতে রাজী নই। গোটা বিষয়টি দলের জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ-সহ জেলা নেতৃত্ব এমনকি, জেলা পরিষদের সভাধিপতিকেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু সুরাহা হয়নি।’’
অভিযোগের কথা তোলায় তাঁকে অপমানিত করা হয় বলেও মিঠু জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর অভিযোগের তির স্বপনের দিকে।
ত্রাণ বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ হিসেবে আমফানে ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্যের জন্য মিঠু প্রত্যেক জেলা পরিষদ সদস্যকে ৫টি করে ত্রিপল দেবার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে অপমান করা হয়। তাই বাধ্য হয়েই তিনি পদত্যাগ করছেন। যদিও মিঠু জানান, তিনি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ পদ থেকে ইস্তফা দিলেও তৃণমূলের জেলা সাধারণ সম্পাদক হিসাবে এবং জেলা পরিষদের সদস্য হিসাবে কাজ করে যাবেন। তৃণমূল ছেড়ে অন্য দলেও যাবেন না।
মিঠুর ইস্তফা সম্পর্কে জেলা পরিষদের সভাধিপতি শম্পা ধাড়া বুধবার বলেন, ‘‘এখনও এ বিষয়ে আমারে কিছু জানানো হয়নি। জেলা পরিষদের সব কর্মাধ্যক্ষই নিজের মত স্বাধীন ভাবে কাজ করেন। কাউকে কাজ বাধা দেওয়া হয় না।’’ মিঠুর পদত্যাগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের অন্যতম মুখপাত্র তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, ‘‘কোনও সমস্যা হতেই পারে। তা বড় ব্যাপার নয়। সব আলোচনা করে মিটিয়ে নেওয়া হবে।’’
সম্প্রতি জেলা তৃণমূলের দু’জন বিধায়ক এবং এক সাংসদ বিজেপি-তে যোগদান দিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কর্মাধ্যক্ষ পদ থেকে মিঠুর ইস্তফার ঘোষণা তাই নতুন জল্পনা তৈরি করেছে।