কৌশিক মণ্ডল (বাঁ দিকে), সানি মিত্র (ডান দিকে)। —নিজস্ব চিত্র।
শ্রীহরিকোটা থেকে সূর্যের কক্ষপথের দিকে আজ, শনিবার উড়ে যাবে ভারতীয় মহাকাশযান ‘আদিত্য এল-১’। এই প্রকল্পের কাজে শামিল রয়েছেন দুই বর্ধমানের দুই প্রযুক্তিবিদও। রকেটে সওয়ার মহাকাশযানটি ঠিকমতো উড়ে গিয়ে কক্ষপথে প্রবেশ করছে কি না, দিন-রাত এক করে যে দলটি সে নিয়ে কাজ করবে, তার সদস্য পূর্ব বর্ধমানের কৌশিক মণ্ডল। কেরলে তিরুঅনন্তপুরমে ইসরোর দলের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তিনি। মহাকাশযানের বিকাশ ইঞ্জিন দেখভালের দলে আবার রয়েছেন পশ্চিম বর্ধমানের সানি মিত্র।
মেমারির বাসিন্দা কৌশিক জানাচ্ছেন, সূর্যের দিকে চোখ রেখে উড়তে চলা মহাকাশযানটি সাফল্যের সঙ্গে কক্ষপথে ঢুকবে, এ বিষয়ে তাঁরা আত্মবিশ্বাসী। পিএসএলভি রকেটে সওয়ার হয়ে সূর্যের দিকে প্রায় ১৫ লক্ষ কিলোমিটার গিয়ে কক্ষপথে ঢুকবে মহাকাশযানটি। সেখান থেকে খুব কম জ্বালানিতে সৌরমণ্ডল সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে সেটি। ‘ভার্চুয়ালি লঞ্চ’ ঠিকঠাক হল কি না, তা দেখার দলে রয়েছেন কৌশিক। তাঁর কথায়, ‘‘যে রকেটে মহাকাশযানটি সূর্যের দিকে যাবে, তার পুরো যাত্রাপথ নজরে রাখা হবে।’’ সামান্য বিচ্যুতি ঘটলেই ‘গ্রাউন্ড স্টেশন’ থেকে বিশেষ নির্দেশ পাঠিয়ে কক্ষপথে ফিরিয়ে আনা হয়, জানান তিনি। কৌশিক আদতে মেমারির মেলনা গ্রামের বাসিন্দা। বাবা সাধনচন্দ্র মণ্ডলের গ্রামে ছোট মুদির দোকান ছিল। আর আছে কয়েক বিঘা জমি। কৌশিকের ভাই শৌভিক আরামবাগের একটি কলেজের শিক্ষক। কৌশিকের কথায়, ‘‘আমরা দুই ভাই নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই বড় হয়েছি। চেয়েচিন্তে পড়াশোনা করেছি। বইয়ের অভাব মিটিয়েছে গ্রন্থাগার ও বন্ধুরা।’’ ২০০৮ সালে স্থানীয় বনগ্রাম পরমানন্দ মিশন থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন কৌশিক। সেখান থেকে কাটোয়ার জাজিগ্রামে পলিটেকনিক কলেজে ভর্তি হন। বর্ধমানের ইউআইটি থেকে ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিউনিকেশন নিয়ে স্নাতক হন। ২০১৪ সালে শিবপুরের আইআইইএসটি-তে এম টেক-এ ভর্তি হন। সে বছরই ইসরোয় যোগ দিতে পরীক্ষা দেন। ২০১৬ থেকে ইসরোয় রয়েছেন কৌশিক।
ছেলের সাফল্য দেখতে তিরুঅনন্তপুরমে গিয়েছেন বাবা সাধন ও মা সরস্বতী। তাঁদের কথায়, ‘‘অনেক কষ্ট করে ছেলেদের পড়িয়েছি। এই সাফল্য তো শুধু ছেলের নয়, গোটা দেশের, বিজ্ঞানের।’’ গ্রামের কালীপুজোয় ফি বছর স্ত্রী প্রিয়াকে নিয়ে আসেন কৌশিক। মহাকাশযানের সাফল্যের জন্য প্রার্থনা করছেন তাঁরা, জানান কৌশিকের পরিজনেরা। কৌশিক মনে করেন, ‘‘এই অভিযান সফল হলে মহাকাশ গবেষণায় ভারত এক ধাপ এগিয়ে যাবে। উষ্ণায়ন, সৌরঝড় সম্পর্কে বহু তথ্য পাওয়া যাবে।’’
রানিগঞ্জের সানি মিত্র দুর্গাপুরের বেসরকারি স্কুলে পড়াশোনার পরে খড়্গপুর আইআইটি থেকে বি টেক এবং এম টেক পাশ করেন। ২০১৮ সাল থেকে ইসরোয় রয়েছেন। চন্দ্রযান ৩-এর পরে এই অভিযানেও প্রযুক্তিবিদ হিসেবে রয়েছেন তিনি। আদিত্য এল-১ অভিযানের বিকাশ ইঞ্জিনের দেখভালের দায়িত্বে যে চার জনের দল রয়েছে, সেটির সদস্য সানি। তিনি জানান, দেড় বছর আগে এই কাজ শুরু করতে হয়েছে। তাঁর কথায়, “অভিযান সফল না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিন্তে ঘুম হচ্ছে না।” তাঁর বাবা শঙ্কর মিত্র জানান, চন্দ্রযান ৩ সফল হওয়ার পরে এই মহাকাশযানেও সাফল্য আসবে, তাতে ছেলের যোগদান উদযাপনের আশায় আছেন তাঁরা।