রাত প্রায় ১১টা। নির্জন গলিতে দাঁড়িয়ে মোবাইলে কাকে যেন ফোন করে এক প্রৌঢ় বললেন, ‘একটা বাচ্চা লাগবে।’ ঠিক মিনিট দশ পরে জ্বলে উঠল হেডলাইটের আলো। একটি ছোট্ট বোতলের হাতবদল করেই সাঁ করে বেরিয়ে গেল মোটরবাইক। এ ভাবেই কালনা শহর জুড়ে মদের ‘ডেলিভারি’র রমরমা বাড়ছে বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের একাংশের।
কী ভাবে চলে এই মদ-ডেলিভারি? শহরের পুরনো বাসস্ট্যান্ড চত্বর, দুলালমুচির মোড়, শীতলাতলা, বৈদ্যপুরমোড়, হসপিটাল মোড়, ছোট দেউরিমোড়-সহ শহরের নানা জায়গায় ছোট-বড় ঠেক বসে। সেরকমই একটি ঠেকে গিয়ে দেখা গেল, মদের বোতল প্রায় খালি। কিন্তু নেশাড়ুদের চাহিদা, আরও মদ! অগত্যা ফোন গেল নির্দিষ্ট নম্বরে। এক নেশাড়ুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, রাত দু’টো পর্যন্ত যে কোনও সময়ে এই ‘ডেলিভারি’ মেলে। মদের বোতলের আকার অনুযায়ী রয়েছে নানা নাম, ‘মেজো খোকা’ (৩৭৫ মিলিলিটার), ‘বড় খোকা’ (৭৫০ মিলিলিটার)। সঙ্গে জুড়ে দিতে হয় কী মদ লাগবে আর কোন ব্র্যান্ডের। শহরেরই এক যুবক জানান, সাধারণত, হুইস্কি, রাম, ভদকা, বিয়ার থেকে শুরু করে দেশি— প্রায় সব কিসিমের মদই রয়েছে ‘ডেলিভারি-বয়’দের কাছে।
মদের সঙ্গে জলের বোতল, ছোলা, বাদাম, চানাচুর-সহ বিভিন্ন ‘চাট’ও মেলে সহজেই। কী রকম দাম পড়ে এ সবের? সূত্রের খবর, মদের বোতলের দাম বাজারদরের তুলনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ বেশি দামে কিনতে হয়। যেমন, একটি জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের হুইস্কির ১৮০ মিলিলিটার বোতলের বাজারদর ২২০ টাকা। ‘ডেলিভারি’তে তা পড়ে ২৫০ টাকার মতো। একটি ব্র্যান্ডের ভদকার ৩৭৫ মিলিলিটার বোতলের দাম ৪৯৫ টাকা। ডেলিভারিতে তার দর ৫৭০ টাকার কাছাকাছি। এক ঠোঙা চাটের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকার মতো।
নেশাড়ু এক দল যুবক জানায়, তাঁরা সাধারণত ডেলিভারিতেই মদ কেনেন। কেন? এক জনের কথায়, ‘‘হোটেল, দোকানে অনেক সময়ে পুলিশি ধরপাকড় চলে। এ ক্ষেত্রে সে সব ঝামেলা নেই।’’ কিন্তু এই মদের রমরমার কারণে ক্ষুব্ধ শহরবাসীর একাংশ। প্রসূন কোলে নামে এক বাসিন্দার ক্ষোভ, ‘‘অনেক সময়েই দেখা যায়, মদ খেয়ে তরুণের দল নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ঝড়ের গতিতে মোটরবাইক ছোটাচ্ছে। রাস্তা-ঘাটে চলাফেরা করতেও অনেক সময়ে ভয় হচ্ছে।’’
তবে এই রমরমা রুখতে আবগারি দফতরের সঙ্গে যৌথ ভাবে অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন কালনার মহকুমাশাসক নীতিন সিংহানিয়া। কালনার এসডিপিও প্রিয়ব্রত রায় বলেন, ‘‘ভ্রাম্যমান মদ বিক্রেতাদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করা হবে।’’ কালনা থানার এক পুলিশ আধিকারিক জানান, ভ্রাম্যমান এই মদবিক্রেতাদের ৪৬ বেঙ্গল এক্সাইজ আইনে গ্রেফতার করা হয়। দোষী সাব্যস্ত হলে জরিমানার নিদান রয়েছে।