প্রতীকী ছবি।
বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া ১৫১টি ট্রেনের মধ্যে রাজ্যে চলাচল করা ১৫টি রুটের দূরপাল্লার ট্রেন রয়েছে। এর মধ্যে আটটি রুটই গিয়েছে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশনের উপর দিয়ে। রেল মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশ্যে আসার পরে বিভিন্ন কর্মী সংগঠন এর বিরোধিতা করেছে। পাশাপাশি, যাত্রীদের একাংশ, ট্রেন-যাত্রার ভাড়া কী হবে, তা নিয়ে কৌতূহল প্রকাশ করেছেন।
রেল সুত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া থেকে রাঁচী, পুণে, আনন্দবিহার (দিল্লি), বারাণসী (ভায়া পটনা), ভাগলপুর, মুম্বই এবং আসানসোল থেকে পুরী ও সুরাত রুটে মোট আটটি ট্রেন আসানসোল ডিভিশন দিয়ে চলাচল করবে।
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পরেই ‘ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস ইউনিয়ন’-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মনোহর সমণ্ডল বলেন, ‘‘এই সিদ্ধান্তে রেলকর্মীদের ভবিষ্যৎ প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে।’’ ওই সংগঠনের দাবি, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে, রেলের কারিগরি দফতর, ‘ট্র্যাক’ পরীক্ষক, ‘সিগন্যাল অপারেটর’, ট্রেনের ‘চেকিং স্টাফে’র সংখ্যা অনেকটাই কমে যাবে। ফলে, কর্মী সঙ্কোচন ঘটবে। পাশাপাশি, নিয়োগও হবে না।
‘ইস্টার্ন রেলওয়ে মেনস কংগ্রেস’-এর ইস্টার্ন জোনের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপলাল মিত্রের আশঙ্কা, ‘‘এই ব্যবস্থায় ধীরে ধীরে রেল বেসরকারি হাতে চলে যাবে। রেলের টিকিটের দাম বাড়বে। সাধারণ যাত্রীদের ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে রেল।’’ ওই সংগঠনের অভিযোগ, সরকারি টাকায় রেলের পরিকাঠামোর উন্নয়ন হলেও মুনাফা যাবে বেসরকারি সংস্থার খাতায়। পাশাপাশি, সংগঠনের দাবি, ১৫টি দূরপাল্লার ট্রেন বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার পাশাপাশি, রাজ্যে চলা ১৭ জোড়া ট্রেনের পরিচালনও বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরএসএস প্রভাবিত ‘পূর্ব রেলওয়ে কর্মচারী সঙ্ঘ’-এর রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক তপন দাসও জানান, বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন চলছে।
তবে বিজেপি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। বিজেপির জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, এই সিদ্ধান্তের ফলে, যাত্রী পরিষেবায় প্রতিযোগিতা বাড়বে। সাধারণ যাত্রীরা উপকৃত হবেন। তাঁর আরও দাবি, আসানসোল থেকেই পুরী ও সুরাত যাওয়ার জন্য দু’টি ট্রেন ছাড়ার কথা। তা হলে জেলাবাসীর উপকার হবে।
যদিও বিষয়টি নিয়ে কিছু কৌতূহলের কথাও শুনিয়েছেন রেলযাত্রীদের একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ‘সেল’-এর এক আধিকারিক জানান, এক সময় ইস্পাত শহরগুলির কর্মী, আধিকারিকদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য হাওড়া থেকে রাঁচী পর্যন্ত শতাব্দী এক্সপ্রেস ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে দেখা যাচ্ছে, বেসরকারি সংস্থা হাওড়া থেকে রাঁচী পর্যন্ত দূরপাল্লার ট্রেন চালাবে। সে ক্ষেত্রে শতাব্দীর ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওই আধিকারিক। দেবপ্রিয় হালদার নামে এক যাত্রী অবশ্য বলেন, ‘‘ভাড়া সাধ্যের মধ্যে থাকবে কি না, সেটা দেখার। তা যদি থাকে, বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে ট্রেন চালানো হলে সবাই উপকৃত হবেন।’’