ক্ষুব্ধ দুর্গাপুরের শ্রমিক নেতৃত্ব

দেশের অন্যত্র কারখানা খুলছে, ‘ব্রাত্য’ শুধু শহর

১৯৬৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী দুর্গাপুর সার কারখানার শিলান্যাস করেন। প্রায় ছ’শো একর এলাকায় কারখানা ও চারশো একর জায়গায় কর্মীদের জন্য টাউনশিপ গড়ে ওঠে।

Advertisement

সুব্রত সীট

দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০৬
Share:

বিহারের বারাউনি, ঝাড়খণ্ডের সিন্দ্রির পরে এ বার ওড়িশার তালচের। আরও একটি বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চালুর বিষয়ে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। সম্প্রতি প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে তালচেরের কারখানাটি নতুন করে চালু করার জন্য প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু এই সমস্ত উদ্যোগে কোথাও যেন ব্রাত্য থেকে গিয়েছে দুর্গাপুরের বন্ধ সার কারখানা, অভিযোগ শ্রমিক সংগঠনগুলির।

Advertisement

১৯৬৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী দুর্গাপুর সার কারখানার শিলান্যাস করেন। প্রায় ছ’শো একর এলাকায় কারখানা ও চারশো একর জায়গায় কর্মীদের জন্য টাউনশিপ গড়ে ওঠে। ১৯৭৪-এ শুরু হয় ইউরিয়া উৎপাদন। কাঁচামাল হিসেবে ন্যাপথা ব্যবহার করে ইউরিয়া উৎপাদনের খরচ বেশি পড়ায় বিদেশ থেকে ইউরিয়া আমদানির সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে নয়ের দশকের গোড়া থেকে কারখানা রুগ্‌ণ হতে শুরু করে। ১৯৯৮ সালে উৎপাদন বন্ধ হওয়ার পরে কারখানাটি চলে যায় ‘বোর্ড ফর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল রিকনস্ট্রাকশন’ (বিআইএফআর)-এর হাতে।

দেশে সারের ঘাটতি মেটাতে ২০০৭-র এপ্রিলে দেশের বিভিন্ন বন্ধ সার কারখানা নতুন করে চালু করা যায় কি না, তা খতিয়ে দেখার কাজ শুরু হয়। গড়া হয় সচিবদের নিয়ে বিশেষ কমিটি (এমপাওয়ার্ড কমিটি অফ সেক্রেটারিস)। ২০১১-য় কমিটি অন ইকোনমিক অ্যাফেয়ার্স কমিটি দুর্গাপুরের সার কারখানা পুনরুজ্জীবনের প্রশ্নে সায় দেয়। দেশের মোট আটটি বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানার মধ্যে বারাউনি, সিন্দ্রি ও তালচেরের কারখানা খোলার বিষয়ে উদ্যোগী হয় কেন্দ্রীয় সরকার।

Advertisement

এমনকি, আগামী ৩৬ মাসের মধ্যে তালচেরের কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে আশ্বাস দিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দুর্গাপুরের সার কারখানা-সহ বাকি পাঁচটি কারখানা নিলাম করে বেসরকারি উদ্যোগে খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও সে বিষয়ে কাজ এগোয়নি।

কর্মীদের একাংশ কারখানা আর খুলবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন। তবে হাল ছাড়ছে না শ্রমিক সংগঠনগুলি। কারখানার জমির ‘লিজ’ ও অন্য পরিষেবা বাবদ সার কারখানার কাছে এডিডিএ-র পাওনা রয়েছে পাঁচশো কোটিরও বেশি। অগস্টের শুরুতে কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ এডিডিএ-র কাছে স্মারকলিপি দেয়। সিটু জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তী, আইএনটিইউসি জেলা সভাপতি বিকাশ ঘটকেরা কারখানা ফের খোলার জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপের আর্জি জানান। এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের আশ্বাস দেন। সম্প্রতি অ্যালয় স্টিল প্ল্যান্ট পরিদর্শনে আসেন সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। তঁর কাছেও সার কারখানা-সহ অন্য বন্ধ কারখানা খোলার বিষয়ে তোড়জোড় করার জন্য আর্জি জানায় শ্রমিক সংগঠনগুলি।

তবে দুর্গাপুরের কারখানা খোলার বিষয়ে তোড়জোড়় শুরু না হওয়ায় রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়েও চাপানউতোর শুরু হয়েছে। সিটু নেতা বিনয়েন্দ্রকিশোরবাবু বলেন, ‘‘যে কারখানাগুলি চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, সেগুলির ক্ষেত্রে পরিষেবাগত নানা দায় রাজ্য সরকার মকুব করে দিয়েছে। কিন্তু দুর্গাপুরের ক্ষেত্রে আমাদের রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত সে রকম কোনও অবস্থান নেয়নি।’’ তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘বাম আমলের অনিয়ন্ত্রিত শ্রমিক আন্দোলনের জেরে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়েছে। এখন আর এ সব অভিযোগের কোনও মূল্য নেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement