জল আনতে যাচ্ছেন মহিলারা। আউশগ্রামের শোকাডাঙায়। ছবি: প্রদীপ মুখোপাধ্যায়
রোদের তেজে ঘর থেকে বেরনো মুশকিল। তার মধ্যেই মাথায় হাঁড়ি-কলসি, হাতে বালতি নিয়ে পানীয় জল আনতে যান আউশগ্রামর শোকাডাঙার মহিলারা। চাষের জন্য বসানো সাবমার্সিবল পাম্পের জলেই চলে দৈনন্দিনের কাজ। বাড়ির অন্য প্রয়োজনের জন্যও ভরসা পাঁচশো মিটার দূরের একটি পুকুর। নদীঘেরা জেলার বহু জায়গাতেই জলের অপ্রতুলতা রয়েছে এখনও।
পঞ্চায়েত বাড়ি-বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ করলেও জেলার নানা প্রান্তে কাজের বিস্তর ফারাক রয়ে গিয়েছে। যত বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়ার কথা তার অর্ধেকেও পাইপ লাইন পৌঁছয়নি। দামোদরের পাড়ের জামালপুরে ৭৬ শতাংশ বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে। আবার জেলার আর এক প্রান্ত কেতুগ্রাম ১ ব্লকে মাত্র ১৩ শতাংশ বাড়িতে জলের সংযোগ রয়েছে। জেলা প্রশাসনের দাবি, ২০২৪ সালের মধ্যে সব বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়া হবে। যদিও আশ্বাস আর বাস্তবের মাঝে যে কয়েক যোজন পথ, তা বুঝছেন বাসিন্দারা।
আউশগ্রামের শোকাডাঙার সবি হাঁসদা, লক্ষ্মী হেমব্রমদের দাবি, ‘‘পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। সেই কারণেই গ্রামের বাইরে খেতজমিতে থাকা সাবমার্সিবল পাম্প থেকে পানীয় জল নিয়ে আসতে হচ্ছে। সেখানেও সব সময় জল পাওয়া যায় না।’’ তাঁদের আরও দাবি, গ্রামে ছয়-সাতটি নলকূপ থাকলেও অধিকাংশ সময়ে তা খারাপ হয়ে পড়ে থাকে। জলাশয়গুলিতেও জল পাওয়া যায় না। দল বেঁধে বিডিওর কাছে অভিযোগও জানিয়েছিলেন তাঁরা।
শুধু আউশগ্রাম নয়, কেতুগ্রাম, ভাতার, মঙ্গলকোট, রায়না, খণ্ডঘোষের মতো ব্লকেও পানীয় জলের সঙ্কট রয়েছে। সম্প্রতি ‘নবজাগরণ যাত্রায়’ বেরিয়ে পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন ব্লকে পানীয় জল নিয়ে ক্ষোভের আঁচ পান তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সাধারণ মানুষ তো বটেই, নেতারাও তাঁর কাছে জলের অপ্রতুলতার কথা জানান। পরিস্থিতি গুরুতর বুঝে জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের মন্ত্রী পুলক রায়কে পূর্ব বর্ধমান জেলায় বৈঠক করে সমস্যা মেটানোর কথা বলেন অভিষেক। বৈঠক করে মন্ত্রী বেশ কিছু পরামর্শ দেন। কিন্তু ঘটনা হল, মন্ত্রীর নির্দেশের পরেও জেলায় বাড়ি বাড়ি জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ এক শতাংশও এগোয়নি।
ওই সব বাসিন্দাদের অভিযোগ, পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার দিন পাইপ লাইন দিয়ে জল পড়ছে। কিন্তু দু'এক দিন পার হলেই আর জল মিলছে না। পাইপ লাইনের শেষ প্রান্তে থাকা বাড়িগুলিতেও জল মিলছে না। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে বার বার জানিয়েও লাভ হচ্ছে না। আবার ঠিকাদারেরা রাস্তা খুঁড়ে পাইপ লাইন বসাচ্ছেন, কিন্তু তার পরে সারাচ্ছেন না। গ্রামবাসীদের দাবি, বাড়িতে কল থাকার পরেও তাপপ্রবাহের মধ্যে অন্যত্র জল আনতে যেতে হয়েছে। আবার পাইপ লাইনের জন্য রাস্তায় হাঁটতে দিয়েও হোঁচট খেতে হচ্ছে। জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত জেলায় মাত্র ৩৫টি গ্রামের সব বাড়িতে জলের সংযোগ রয়েছে। জল প্রকল্পর জন্য ৫৯৪টির মধ্যে দু’শোটির মতো প্রকল্পে জমি পাচ্ছে না প্রশাসন। যদিও ভূমি দফতরের মাধ্যমে বেশ কয়েকটি জায়গা কিনেছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। জেলা পরিষদের বিদায়ী কর্মাধ্যক্ষ (জনস্বাস্থ্য ও কারগরি) বাগবুল ইসলাম বলেন, ‘‘যে সব এলাকায় নতুন করে প্রকল্প তৈরি করতে হচ্ছে, সে সব এলাকায় কাজের গতি কম।’’