Women Commission

‘বাধা’ অভিযোগ জানাতে, ক্ষোভ মহিলা কমিশনের

আদালতের নির্দেশে ভোটের ফল ঘোষণার পরে, রাজনৈতিক ভাবে ‘অত্যাচারিত’দের সঙ্গে কথা বলার জন্য মহিলা কমিশনের সদস্যেরা এ দিন বর্ধমানে আসেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২১ ০৫:৪৭
Share:

পুলিশের সঙ্গে কথা মহিলা কমিশনের সদস্যের। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।

ভোটের ফল ঘোষণার পরে, রাজনৈতিক কারণে অত্যাচারের অভিযোগ জানানো কিছু মানুষজনের বয়ান জানতে বর্ধমানে সার্কিট হাউসে ডেকে পাঠিয়েছিল জাতীয় মহিলা কমিশনের দল। সেখানে ঢোকার সময়ে পুলিশ বাধা দিচ্ছে, নাম-পরিচয় জানতে চাইছে— কমিশনের সদস্যদের কাছে এমন অভিযোগ জানালেন কয়েকজন ‘অত্যাচারিত’।

Advertisement

সোমবার এই অভিযোগ শোনার পরেই সার্কিট হাউসের সামনের রাস্তায় বেরিয়ে এসে মহিলা কমিশনের সদস্য রাজুলবেন এল দেশাইকে পুলিশের কর্মী-আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমার তো মনে হচ্ছে, কোনও না কোনও ভাবে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনারা নজরদারি করুন। পুলিশের লোক না হলেও সাধারণ মানুষ বা রাজনৈতিক দলের লোকেরাও হতে পারে। বিষয়টি দেখুন।’’ সংবাদমাধ্যমকে এ বিষয়ে অবশ্য কিছু বলতে চাননি কমিশনের ওই সদস্য। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেনের দাবি, পুলিশ কাউকে বাধা দেয়নি। শুধু কোভিড-বিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে।

আদালতের নির্দেশে ভোটের ফল ঘোষণার পরে, রাজনৈতিক ভাবে ‘অত্যাচারিত’দের সঙ্গে কথা বলার জন্য মহিলা কমিশনের সদস্যেরা এ দিন বর্ধমানে আসেন। পূর্ব বর্ধমান ছাড়া, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম ও নদিয়া থেকে অভিযোগকারীরা এসেছিলেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল প্রায় ৩টে পর্যন্ত ১২৭ জনের সঙ্গে কথা বলে কমিশন। অভিযোগ, ফোন নম্বর, ঠিকানা নেওয়া হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, ‘নির্যাতিত’দের বয়ান খতিয়ে দেখতে আজ, মঙ্গলবার বর্ধমান থানা, খণ্ডঘোষ ও জামালপুরে যেতে পারেন মহিলা কমিশনের তিন সদস্য। কমিশনের ওই সদস্য এ দিন শুধু বলেন, ‘‘অত্যাচারিতদের বক্তব্য শোনা হচ্ছে। এটা গোপন ব্যাপার। হাইকোর্টে রিপোর্ট দেওয়া হবে।’’ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পুলিশ সুপারের সঙ্গে বৈঠকে কেতুগ্রামের একটি ঘটনার বিষয়ে জানতে চায় কমিশন। পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, খুনের মামলা দায়ের করে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ওই ঘটনায়।

Advertisement

আউশগ্রামের প্রেমগঞ্জের বাসিন্দা মাধাই ঘোষ এ দিন অভিযোগ করেন, ভোটের ফলের পর থেকে তিনি ঘরছাড়া। ১৬ বিঘা জমির ধান কাটতে পারেননি। পুলিশ ঘরে ফেরালেও তৃণমূলের ‘অত্যাচারে’ ফের বাড়ির বাইরে থাকতে হচ্ছে। আউশগ্রামের বেলি বাউড়ি, খণ্ডঘোষের রাখি রায়, গলসির পরিমল মাঝিরা অভিযোগ করেন, ভোটের পর থেকেই তৃণমূলের অত্যাচারে তাঁরা ঘরছাড়া ছিলেন। পুলিশ ফেরানোর পরেও হুমকি কমছে না। বাড়ির জিনিসপত্র লুট হয়ে গিয়েছে। অনেকের বাড়িতে জল খাওয়ার পাত্র পর্যন্ত নেই বলে দাবি করেন। তাঁরা জানান, কমিশনকে অভিযোগ জানিয়েছেন। কমিশন তাঁদের আশ্বস্ত করেছে। ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থারও আশ্বাস মিলেছে বলে তাঁদের দাবি।

এই শুনানির মাঝেই অভিযোগ জানাতে আসা মানুষজনের একাংশ কমিশনের সদস্যদের কাছে অভিযোগ করেন, সার্কিট হাউসে ঢোকার মুখে নাম-ঠিকানা ও ছবি তুলে রাখছে পুলিশকর্মীরা। এ কথা শুনেই গেটের কাছে এসে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বর্ধমান সদর) কল্যাণ সিংহরায় এবং এসডিপিও (বর্ধমান দক্ষিণ) আমিনুল ইসলাম খানকে ‘নজরদারির’ কথা বলে যান কমিশনের ওই সদস্য।

বীরভূমের বিজেপি নেতা তাপস দাস, বর্ধমানের নেতা কল্লোল নন্দনদের দাবি, ‘‘গোড়া থেকেই পুলিশ অসহযোগিতা করেছে। অভিযোগকারীদের সার্কিট হাউসে ঢুকতে না দিয়ে কানাইনাটশালে পাঠিয়ে দিয়েছিল। পরে, আবার ছবি, নাম-ঠিকানা নিয়ে সংশ্লিষ্ট জায়গায় খবর পৌঁছে দিচ্ছিল।’’ পুলিশ অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, ভোটের আগে এলাকায় দৌরাত্ম্য করা বিজেপির কিছু লোকজন ফল বেরনোর পরে ভয়ে এলাকা ছেড়েছিলেন। তাঁদের অনেককেই বাড়ি ফেরানো হয়েছে। হুমকি, লুটপাটের অভিযোগ ঠিক নয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement