বাঁ দিক থেকে, অভিনব দত্ত, শতরূপা রায়, বিক্রম চক্রবর্তী ও সুস্মিতা দত্ত। নিজস্ব চিত্র
চালকলের কর্মী আউশগ্রামের জামতাড়ার বাসিন্দা নেপাল দত্তের ছেলে অভিনবমাধ্যমিকে ৬৪৮ নম্বর পেয়েছে। জামতাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র অভিনব বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। ছেলের স্বপ্ন কী ভাবে পূরণ করবেন, সে ভাবনায় ঘুম ছুটেছে নেপাল ও তাঁর স্ত্রী শিখার। শিখা বলেন, “টাকার অভাবে ছেলের জন্য গৃহশিক্ষক রাখতে পারিনি। অষ্টম শ্রেণিতে ওর রেজাল্ট দেখে গ্রামের দু’জন ছেলেকে বিনা বেতনে পড়াতেন।’’ অভিনব বলে, ‘‘দিনে আট থেকে ন’ঘণ্টা পড়েছি।’’ নেপালের কথায়, “এতদিন ছেলে নিজের চেষ্টায় পড়াশোনা করেছে। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকের বইপত্র ও টিউশন ফি দিতে পারব কিনা জানি না। কারও সাহায্য পেলে ওর ইচ্ছাপূরণ হবে।”
অমরারগড় উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী অমরারগড়ের শতরূপা রায় মাধ্যমিকে ৬৭৩ নম্বর পেয়েছে। তার বাবা পেশায় রেডিয়ো সারানোর মিস্ত্রি রাজীব রায়ের মাসিক আয় মেরেকেটে ছ’হাজার টাকা। স্ত্রী শোভনাবাড়িতে সেলাইয়ের কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘ওর বাবার সামান্য আয়ে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালানো সম্ভব ছিল না। আত্মীয় পরিজনেরা সহযোগিতা করেছেন।’’ দৈনিক ১০-১২ ঘণ্টা পড়েছে শতরূপা। বাগান করা এবং হাতেরকাজে তার উৎসাহ রয়েছে। শতরূপা বলে, ‘‘পদার্থ বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষকতা করতে চাই।’’ তার বাবা বলছেন, ‘‘এতদিন সকলের সহযোগিতায় মেয়েকে পড়িয়েছি। এ বার কী ভাবে সবদিক সামাল দেব, তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছি।’’
মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছে ভাতারের নাসিগ্রামের বিক্রম চক্রবর্তী। নাসিগ্রাম হাইস্কুলের ছাত্র বিক্রমের বাবা সনাতন কম্পিউটার সারানোর কাজ করেন। মালডাঙা বাজারে ছোট একটি দোকান রয়েছে তাঁর। তাঁর স্ত্রী কুসুম ঘর সামলান। গ্রামের শিক্ষক দিলীপ রায়ের কাছে পড়াশোনা করত বিক্রম। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘ছোট থেকেই ছেলেটি পড়াশোনায় ভীষণ মনোযোগী।’’ নাসিগ্রাম হাই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শুভাশিস কুন্ডুবলেন, ‘‘বিক্রম আমাদের গর্বিত করেছে।’’ ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় বিক্রম। সনাতন বলেন, ‘‘কী করে ওর পড়াশোনার খরচ জোগাড় করব জানি না। চিন্তায় আছি।’’
অন্যের গাড়ি চালিয়ে মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছেন বড়শুল ১ পঞ্চায়েতের সিনেমাতলার বাসিন্দা রবীন্দ্রনাথ দত্ত। হতাশ করেনিমেয়ে সুস্মিতা। শক্তিগড় গার্লস হাইস্কুলের ওই ছাত্রী মাধ্যমিকে ৯৪ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়েছে। মেয়ের সাফল্যে খুশি রবীন্দ্রনাথ ও তাঁর স্ত্রী মামনি। রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘‘বিজ্ঞাননিয়ে পড়ার খরচ বেশি। কী করে তা বহন করব ভেবে পাচ্ছি না।’’ সুস্মিতা বলে, ‘‘দিলে ৮-১০ ঘণ্টা পড়েছি। স্কুলের শিক্ষিকারাসাহায্য করতেন।’’