WB Madhyamik exam 2023

শিক্ষকদের একাংশের ধারণা করোনা-কালে পিছিয়ে পড়ারই কি প্রভাব ফলে

বর্ধমান শহরের প্রান্তে তেজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ বার ৪০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৩৬ জন। সর্বোচ্চ নম্বর ৭৬ শতাংশ।

Advertisement

সুপ্রকাশ চৌধুরী

বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২৩ ০৮:৩৪
Share:

মার্কশিট হাতে উমারানী গরাই মহিলা কল্যাণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা। শুক্রবার আসানসোলে। ছবি: পাপন চৌধুরী।

মাধ্যমিকের মেধাতালিকার প্রথম স্থানে রয়েছে জেলার ছাত্রী। শুধু তাই নয়, মেধাতালিকায় মোট ১৭ জন পূর্ব বর্ধমানের। এক দিকে যখন এমন উজ্জ্বল ছবি, অন্য দিকে তখন নিরাশার ছবি পাশের হারে। শিক্ষক মহলের একাংশের দাবি, শহরের বড় স্কুলগুলি ভাল ফলের ধারা বজায় রাখলেও, শহর ছেড়ে বেরোলেই অনেক স্কুলের ফল তুলনায় খারাপ হয়েছে। মূলত যে সব স্কুলের পড়ুয়ারা স্কুলের উপরেই নির্ভরশীল, সেগুলির ফলাফলে বেশি প্রভাব পড়েছে বলে অভিযোগ। করোনা-কালে বড় সময় পড়ুয়ারা স্কুল থেকে দূরে থাকার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে শিক্ষকদের একটি বড় অংশের ধারণা।

Advertisement

বর্ধমান শহরের প্রান্তে তেজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে এ বার ৪০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৩৬ জন। সর্বোচ্চ নম্বর ৭৬ শতাংশ। স্কুল সূত্রে জানা যায়, মূলত পিছিয়ে পড়া অংশের ছেলেমেয়েরা এই স্কুলের পড়ুয়া। শিক্ষকদের দাবি, এত খারাপ ফল গত পাঁচ-ছ’বছরে হয়নি। সর্বোচ্চ অন্তত ৮৫-৮৭ শতাংশ নম্বর মিলত। স্কুলের শিক্ষক প্রতনু রক্ষিতবলেন, ‘‘অঙ্ক ও পদার্থবিদ্যায় অনেকের নম্বর কম এসেছে। বোঝাই যাচ্ছে, করোনা-পর্বে এই দুই তুলনামূলক শক্ত বিষয়ে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছিল, স্কুলে না আসায় অনেক পড়ুয়ারতা মেটেনি।’’

বর্ধমান ১ ব্লকের কৃষ্ণপুর হাইস্কুলও পিছিয়ে পড়া ছেলেমেয়েদের নিয়ে লড়াই করে অতীতে ভাল সাফল্য পেয়েছে। সেখানেও শিক্ষকদের এ বার মন খারাপ। তাঁদের ৫৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে এ বার উত্তীর্ণ হয়েছে ৪১ জন। সর্বোচ্চ ৪০৯। স্কুলের শিক্ষকেরা জানান, করোনা-পর্বে তাঁরা এলাকায় ঘুরে স্কুলছুটদের ফিরিয়েছিলেন। অনেকেই পড়া ছেড়ে কাজে যোগ দিয়েছিল। তাদের ফর্ম পূরণ করানো গেলেও, পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যাওয়ায় অনেকেই আর পাশ করতে পারেনি। প্রধান শিক্ষক সৌমেন কোনার বলেন, ‘‘এই ফল কোনও বার হয় না। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এ বার অনেক পড়ুয়াই পিছিয়ে পড়েছিল।’’ তাঁর দাবি, করোনার প্রভাব এখানেই শেষ হবে না। উচ্চ মাধ্যমিকেও এর প্রভাব দেখা যাবে।

Advertisement

বর্ধমানের আর এক স্কুল আদর্শ বিদ্যালয়ের তিন জন পড়ুয়া করোনা সংক্রমণের সময়ে স্কুল ছেড়ে চাষের কাজে যোগ দেয়। তাদের খুঁজে এনে মাধ্যমিকে পরীক্ষায় বসান শিক্ষকেরা। স্কুল সূত্রে জানা যায়, এ বারসার্বিক ফল আশানুরূপ নয়। বেশ কয়েক জন পাশ করতে পারেনি। প্রধান শিক্ষক সুবীরকুমার দে বলেন, ‘‘তিন প্রতিবন্ধী ছাত্র এ বার স্কুল থেকে ভাল নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। আবার, কয়েক জন পাশ করতে পারেনি। যাদের বাড়িতে নজর ছিল, পরিবার থেকে কিছুটা সাহায্য মিলেছে, তারা নানা সমস্যা কাটিয়ে সফল হয়েছে। যারা পিছিয়ে ছিল, তারা আরও পিছিয়ে গিয়েছে। ফল দেখে তেমনই মনে হচ্ছে।’’

এই সমস্যা মেটানোর জন্য স্কুলকেই দায়িত্ব নিতে হবে, দাবি শিক্ষক মহলের। উদয়পল্লি শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক গোপাল ঘোষাল, রথতলা মনোহর দাস স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়দের মতে, ‘‘ঘাটতি হয়েছে। ঘাটতি রয়েও গেছে। এর প্রভাবও দীর্ঘস্থায়ী। তাই স্কুলকেই দায়িত্ব নিতে হবে পড়ুয়াদের ঘাটতি মিটিয়ে ফেলার।’’ অভিভাবকদেরও এ বিষয়ে এগিয়ে আসার ডাক দিয়েছেন শিক্ষকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement