রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েই রয়েছে রিকশা। কাটোয়ায়। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়ে রুজিতে টান পড়েছিল আগেই। করোনা রুখতে ‘লকডাউন’ শুরু হওয়ার পর থেকে রোজগার একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পেট চালানো মুশকিল হয়ে উঠেছে, অভিযোগ রিকশা চালকদের। সপ্তাহ তিনেকের বেশি সময় উপার্জন না থাকায় দু’বেলার খাবার জোটানোই দায় হয়ে উঠেছে, জানান তাঁদের অনেকে। প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য জানান, রিকশা চালকদের জন্য রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
করোনা মোকাবিলায় বন্ধ রাখা হয়েছে সব রকম গণ পরিবহণ ব্যবস্থা। সেই আওতায় পড়েছে রিকশাও। কাটোয়া ও শহর লাগোয়া এলাকার রিকশা চালকেরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে একচিলতে ঘরের সামনেই দাঁড় করিয়ে রাখা আছে রিকশা। সংক্রমণের আশঙ্কা সত্ত্বেও কেউ-কেউ রাস্তায় বেরোতে চেয়েছেন। কিন্তু পুলিশের ভয়ে বেরোতে পারেননি। তাঁদের আশঙ্কা, দীর্ঘদিন এক ভাবে পড়ে থাকলে রিকশার যন্ত্রাংশও খারাপ হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ‘লকডাউন’ ওঠার পরে, রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বাড়ার চিন্তা রয়েছে।
বছর সাতেক আগেও কাটোয়া শহরের নানা প্রান্তে চলাচলের জন্য বাসিন্দাদের ভরসা ছিল রিকশা। পরে টোটো চালু হয়। রিকশা চালকদের দাবি, তাতে তাঁদের রুজিতে টান পড়ে। যথেষ্ট যাত্রী না মিলতে থাকায় অনেকে অন্য পেশায় চলে যান। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, এখন কাটোয়া শহরে ৭৫৬টি রিকশা চলাচল করে। মণ্ডলপাড়ার রিকশা চালক খাইরুল শেখ, আজিজুল দেওয়ানদের কথায়, ‘‘রাস্তায় বেরোলে এমনিতেই আমরা আর আগের মতো যাত্রী পাই না। সকাল থেকে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে দিনের শেষে শ’দুয়েক টাকা রোজগার হয়। ‘লকডাউন’-এ আমরা ঘরবন্দি হয়ে রয়েছি। রেশনের চাল ও আটায় কোনও রকমে দিন কাটছে। পরিচিতদের কাছ থেকে ধার করে আনাজ, তেল, নুন কিনছি।’’
রিকশা চালকদের অনেকেরই প্রশ্ন, এ ভাবে আর কত দিন চলবে? করোনায় আক্রান্ত না হলেও হয়তো অনাহারে মরতে হবে, দাবি করছেন তাঁরা। আজিজুলদের দাবি, সরকারের তরফে আর্থিক সাহায্য না মিললে তাঁদের পক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল হবে। আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘কাটোয়া মহকুমা রিকশ ইউনিয়ন’-এর সম্পাদক রাইহান শেখের বক্তব্য, ‘‘খুব কষ্টের মধ্যে রয়েছি। রিকশাগুলি পড়ে থেকে নষ্ট হতে বসেছে। বিধায়কের কাছে আবেদন জানিয়েছি সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থার জন্য।’’
কাটোয়ার বিধায়ক তথা পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় জানান, রিকশা চালকদের রেশনের স্লিপ দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু সাহায্যের জন্য পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে আশ্বাস তাঁর।