Coronavirus

‘বাড়িতেই থাকব’, বললেন রিকশাচালক

টানা আট দিন রিকশা চালিয়ে মঙ্গলবার সকালে ডুবুরডিহি সীমানায় আটকে পড়েন কিশোর সাউ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

আসানসোল শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০২০ ০৪:৩২
Share:

বাড়ির পথে কিশোর সাউ। নিজস্ব চিত্র

গত এক মাস ধরে এক জনও যাত্রী মেলেনি। টাকার টানাটানি উঠেছে চরমে। অগত্যা আর অপেক্ষা না করে নিজের রিকশা নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিলেন বাড়ির পথে। বুধবার দুপুরে পশ্চিম বর্ধমানের কুলটির ডুবুরডিহি সীমানা পেরিয়ে রাজ্যে প্রবেশের পরে, খানিক স্বস্তি পেলেন হাওড়ার বালির বাসিন্দা কিশোর সাউ।

Advertisement

উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে বালির দূরত্ব প্রায় ৬৭০ কিলোমিটার। কিশোরবাবু জানান, প্রায় তিরিশ বছর ধরে বারাণসীতে রিকশা চালিয়ে সংসার চালাচ্ছেন তিনি। সেখানে তিনি একাই থাকেন। বছরের আট মাস কাটে বারাণসীতে। বাকি চার মাস পৈতৃক বাড়ি বালিতে থাকেন তিনি। কিশোরবাবু বলেন, ‘‘বারাণসীতে রোজগার ভালই হয়। তবে বর্ষাকালে ব্যবসা মন্দা চলে। সেই সময়ে বালির বাড়িতে চা ও তেলেভাজার অস্থায়ী দোকান চালিয়ে সংসার চালাই। মার্চ মাস থেকে ‘লকডাউন’ শুরু হওয়ার পরে এক জনও যাত্রী মেলেনি। এক মাস দাঁতে দাঁত চেপে পড়েছিলাম সেখানে। আর পেরে উঠলাম না। ২৮ এপ্রিল নিজের রিকশা নিয়েই বাড়ির পথ ধরি।’’

ফেরার পথে অতি প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস রিকশায় বেঁধে নেন তিনি। টানা আট দিন রিকশা চালিয়ে মঙ্গলবার সকালে ডুবুরডিহি সীমানায় আটকে পড়েন। তবে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ বুধবার তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করায় বলে জানান কিশোরবাবু। তিনি বলেন, ‘‘পরীক্ষার রিপোর্ট ও শংসাপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ।’’ তবে পুলিশ জানিয়েছে, সরকারের নির্দেশ রয়েছে ভিন্‌ রাজ্য থেকে আসা প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে হবে। এর পরে পরিস্থিতি বিচার করে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। সেই নির্দেশ মেনেই তাঁকে ছাড়া হয়েছে।

Advertisement

ডুবুরডিহি সীমানায় দাঁড়িয়ে কিশোরবাবু জানান, বালিতে তাঁদের আট পুরুষের বসবাস। মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি বারাণসীতে রিকশা চালাতে চলে যান। বালির বাড়িতে তাঁর অন্য আত্মীয়-পরিজনেরা রয়েছেন। স্ত্রী মারা গিয়েছেন। এক ছেলে কর্মসূত্রে মুম্বইতে থাকেন। মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বারাণসীতে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের জনা ১৯ রিকশা চালক এক সঙ্গে থাকেন। লকডাউনের জেরে এখন আর কেউ সেখানে নেই। সকলেই বাড়ি ফিরেছেন। এই ছন্নছাড়া সময়ে কারও সঙ্গেই যোগাযোগ নেই। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যায় দীর্ঘ ক্ষণ লঙ্গরখানায় দাঁড়িয়ে থেকে আধপেটা খাবার জুটত তাঁর। তার উপরে পরিবারের চিন্তা। অবশেষে নিজের রাজ্যে ঢুকতে পেরে খুশি কিশোরবাবু। বললেন, ‘‘ফেরার পথে তেমন পুলিশি বাধার মুখে পড়তে হয়নি। চেয়েচিন্তে খাবার পেট ভরাতে হয়েছে। ভবিষ্যতে আর কাশীতে ফেরার ইচ্ছে নেই। বাকি জীবনটা বালির বাড়িতেই কাটাব।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement