ইউআইটি পরিদর্শনে পুলিশ, প্রশাসনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র
ট্রেন থেকে নেমে তিন-চার ঘণ্টা লাগছে গন্তব্যস্থলের বাস পেতে। স্টেশন চত্বরে দু’টি অস্থায়ী শিবির করা হয়েছে। পাখা-জলের ব্যবস্থা রয়েছে। তার পরেও প্রচন্ড গরমে হাঁসফাঁস করছেন ভিন্ রাজ্য থেকে আসা যাত্রীরা। শৌচাগার, পর্যাপ্ত খাবার না মেলার অভিযোগ উঠছে। বিক্ষোভও হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও ব্যবস্থা নিতে চলেছে জেলা প্রশাসন।
প্রশাসনের দাবি, আগামী দু’সপ্তাহে আরও শ্রমিক-স্পেশাল ট্রেন আসবে। প্রতিদিন গড়ে দু’হাজার করে যাত্রী নামবেন। সোমবার জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, “পরিযায়ী শ্রমিকেরা বর্ধমানে এসে যাতে কোনও অসুবিধায় না পড়েন, সে জন্যই আমরা ‘ট্রানজ়িট পয়েন্ট’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখানে শ্রমিকেরা আসবেন। বিশ্রাম নেবেন। খাবার খাবেন। তার পরে তাঁদের গন্তব্যস্থলে বাসে করে পৌঁছে দেওয়া হবে।’’ তিনি জানান, বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ‘ইউআইটি’তে ‘ট্রানজ়িট পয়েন্ট’ খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাতে সম্মতি জানিয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ও। এ দিন বিকেলে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়-সহ প্রশাসন ও বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তারা যৌথ ভাবে ইউআইটি পরিদর্শন করেন।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বর্ধমান স্টেশনে এখনও পর্যন্ত ৭৬টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন ঢুকেছে। যাত্রী নেমেছেন ১২,৮৬১ জন। তার মধ্যে পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা ৭,১৯৮ জন। বাকিরা বীরভূম, পশ্চিম বর্ধমান, নদিয়া, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলার। গত ২৪ ঘণ্টায় ২১টি ট্রেনে ৪,৯০৫ জন যাত্রী নেমেছেন বর্ধমান স্টেশনে। তার মধ্যে জেলার রয়েছে, ২,৪২৬ জন। বাকিদের মধ্যে বেশির ভাগই নদিয়ার। অতিরিক্ত জেলাশাসক রজত নন্দর দাবি, নির্ধারিত সূচি মেনে ট্রেন আসছে না। বেশির ভাগ ট্রেন ঘুরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে, এখনও কত ট্রেন আসবে, কত যাত্রী নামবেন বোঝা যাচ্ছে না। তা সত্ত্বেও প্রতিদিন দু’হাজার যাত্রী নামবেন ধরে নিয়ে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। স্টেশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে মা ও শিশুদের ব্যবহারের জন্য বিশ্রাম ঘর, শৌচাগার খুলে দেওয়ার চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বাস পেতে দেরি কেন? প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম (এসবিএসটিসি) থেকে ৩০টি আর বেসরকারি ১৫টি বাস জোগাড় করা হয়েছে। এই ৪৫টি বাস যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দিচ্ছে। অথচ প্রয়োজন রয়েছে ৮০ থেকে ৯০টি বাসের। এ ছাড়া, পরপর দু’টি ট্রেন একই সময়ে চলে এলে স্বাভাবিক ভাবে বাস পেতে দেরি হচ্ছে। ক্ষোভ বাড়ছে যাত্রীদের। তবে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত যাত্রীদের নিয়ে কোনও বাস স্টেশন থেকে বেরোবে না বলে নির্দেশ জারি করা হয়েছে। জেলাশাসক বলেন, “যাত্রীদের সুরক্ষা, বিশ্রাম, নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলি ভেবেই ট্রানজ়িট পয়েন্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’