প্রতীকী ছবি।
চাষের কাজ, আলুর গুদাম থেকে ইটভাটা বা ক্ষুদ্রশিল্প, নানা ক্ষেত্রে কাজ করতে প্রতি বছর জেলায় আসেন ভিন্ জেলা ও অন্য রাজ্যের অনেক শ্রমিক। ‘লকডাউন’-এর জন্য আটকে পড়েছেন তাঁরা। এ ছাড়াও বেশ কিছু ভিন রাজ্যের বাসিন্দা নানা কাজে জেলায় এসে আটকে রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অনেককে রাস্তাতেও রাত কাটাতে হচ্ছে। তাঁদের বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হল পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যে ঝাড়খণ্ডের একটি দলকে বাসে করে ফেরানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া এই জেলার যে বাসিন্দারা ভিন্ রাজ্যে আটকে রয়েছেন, সেই পরিযায়ী শ্রমিক থেকে পুণ্যার্থী, রোগী বা পড়ুয়াদেরও ফিরিয়ে আনার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসনের কর্তারা।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী বলেন, “প্রথম থেকেই ভিন্ রাজ্যে আটকে থাকা আমাদের জেলার বাসিন্দাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট জেলাকে চিঠি দিয়ে পরিস্থিতির উপরে নজর রাখার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তেমনই আমাদের জেলায় আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকেরাও যাতে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন, সে জন্য বিশেষ শিবিরও খোলা হয়েছে।’’ প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানের ২২ হাজারেরও বেশি শ্রমিক ভিন্ রাজ্যে আটকে রয়েছেন। এর মধ্যে প্রায় ১৮ হাজার জনের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে পেরেছে জেলা প্রশাসন। ঠিক হয়েছে, রাজ্য সরকারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে ইচ্ছুক শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হবে। শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করছে কেন্দ্র। তাতে কত জন শ্রমিক ফিরছেন, তার উপরে ওই সিদ্ধান্ত কতটা কার্যকর করা হবে, তা ঠিক হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পূর্ব বর্ধমানে আটকে রয়েছেন ১৪,৭৭৮ জন শ্রমিক। ঝাড়খণ্ডের ৮৭৫২, বিহারের ৫২১৭, উত্তর প্রদেশের ৩৯০, উড়িষ্যার ৬০ জন-সহ নানা জায়গার ওই শ্রমিকেরা এখানে আটকে পড়েছেন। জেলাশাসক জানান, বেশিরভাগই কৃষিজমি, আলুর গুদাম বা ইটভাটায় কাজ করতে এসেছিলেন। প্রশাসনের দাবি, বিভিন্ন রাজ্যের সংশ্লিষ্ট জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকেরা যোগাযোগ করছেন। সেই মতো শ্রমিকদের শারীরিক পরীক্ষা করে বাসে করে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শনিবার রাতে সাহেবগঞ্জের ৭২ জনকে নিয়ে গিয়েছে ঝাড়খণ্ড সরকার। শুক্রবার ৫৭ জনকে বাসে করে রাজস্থানে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে সেখানকার সরকার।
রেলের তরফে জানানো হয়েছে, ট্রেনের খোঁজে ব্যক্তিগত ভাবে স্টেশনে জমায়েত করা যাবে না। সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার যে সব ব্যক্তিদের নামের তালিকা পাঠাবে, তাঁদের ট্রেনে তোলা হবে। ইতিমধ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফেরানোর জন্যে রাজ্য সরকার টাস্ক ফোর্স গঠন করেছে। এই টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে প্রতিদিন যোগাযোগ রাখছেন জেলাশাসকেরা। এর মধ্যেই রাজস্থানের কোটা থেকে জেলায় ফিরেছেন আটকে পড়া পড়ুয়াদের একটি অংশ। এ বার ঘরে ফেরার আশায় রয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিক-সহ অন্যরা।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন, স্বাস্থ্য) রজত নন্দ বলেন, “দুর্গাপুরে একটি ট্রেন সোমবার পৌঁছবে বলে জানানো হয়েছে। শারীরিক পরীক্ষা করার পরে ওই সব শ্রমিকেরা বাড়ি না ‘কোয়রান্টিন’ কেন্দ্র, কোথায় থাকবেন তা ঠিক করা হবে।’’