প্রতীকী ছবি।
‘অনলাইন’-এ ক্লাস চলছিল। কিন্তু কোথাও যেন একটা তাল কাটছিল, মনে হচ্ছিল শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। ‘লকডাউন’-পর্বে কলেজের পর্যবেক্ষণ ছিল, এর কারণ হতে পারে পড়ুয়াদের হতাশা। আর তাই পড়ুয়াদের মানসিক ভাবে চাঙ্গা রাখতে সম্প্রতি ফোন করে, হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে ‘কাউন্সেলিং’ শুরু করেছে রানিগঞ্জের টিডিবি কলেজ।
কলেজের অধ্যক্ষ আশিসকুমার দে বলেন, ‘‘গত ২৬ মার্চ থেকে অনলাইনে পড়াশোনা চলছে। কিন্তু আমাদের পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছিল, তাঁরা অনেকেই হতাশা, দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। তাঁদের মানসিক চাপ কাটাতে কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের মাধ্যমে গত ২৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয় কাউন্সেলিং।’’ কলেজের এই পদক্ষেপের সুফলও মিলছে বলে দাবি অধ্যক্ষ আশিসবাবুর। তিনি জানান, ‘অনলাইন ক্লাস’ শুরু হওয়ার সময়ে মোটামুটি ভাবে ৬০ শতাংশ পড়ুয়া তাতে যোগ দিচ্ছিলেন। কিন্তু এখন সেটা ৯০ শতাংশের আশপাশে।
কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে দু’ঘণ্টা করে কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। ফোন করে, হোয়াটস অ্যাপ বার্তার মাধ্যমে পড়ুয়ারা নানা সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। বিভাগের শিক্ষিকা জিনিয়া রায় জানান, নানারকম অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা। কেউ বলছেন, বাবা-মায়ের আর্থিক অবস্থা খারাপ। কেউ বা আর্থিক অবস্থার উন্নতির জন্য চাকরি করতে চাইছেন। পড়াশোনায় মন বসাতে না পারা, পাঠ্যক্রম ও পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা, মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে কী ভাবে যাওয়া সম্ভব— এমন নানা কিছু বিষয় জানাচ্ছেন পড়ুয়ারা। সেই পড়ুয়াদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান বিভাগের ওই শিক্ষিকা।
বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, একটি ‘কাউন্সেলিং সেল’ রয়েছে। সেখানে বছরের অন্য সময়ের তুলনায় লকডাউন-পর্বে তুলনায় বেশি সংখ্যায় পড়ুয়ারা যোগাযোগ করছেন বলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের দাবি। জিনিয়াদেবী বলেন, ‘‘কাউন্সেলিং করানোর পরে মানসিক চাপ কমানো নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে আলোচনাও করছেন অনেক ছাত্রছাত্রী। ফলে, সামগ্রিক ভাবে সবাই উপকৃত হচ্ছেন।’’
কলেজের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার শান্তনু ঘোষও। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘লকডাউন-পর্বে পড়ুয়ারা মূলত পাঠ্যক্রম শেষ করা, পরীক্ষা কবে হবে, এ সব নিয়ে চিন্তায় থাকছেন। তা থেকে হতাশার জন্ম নেওয়াটা স্বাভাবিক। সামাজিক জীবনের পরিসর অনেকটা সঙ্কুচিত হয়ে যাওয়ার ফলেও অনেকে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে নজর দেওয়াটা খুবই ভাল উদ্যোগ।’’ উদ্যোগকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি, অন্য কলেজেও যাতে এমন পদক্ষেপ করা হয়, সেই আর্জি জানিয়েছেন আসানসোল পুরসভার মেয়র তথা কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারিও।
IIM Udaipur introduces 18 online management courses - ABPeducation