প্রতীকী চিত্র।
তিনি নিজেকে ইউনানি চিকিৎসক বলে দাবি করেন। আবার অ্যালোপ্যথি চিকিৎসাও করেন। এলাকার কাউন্সিলরের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে কাটোয়ার সেই ‘ইউনানি চিকিৎসক’কে তলব করল জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত নথি নিয়ে বুধবার শেখ মহম্মদ কোরবান আলিকে দফতরে ডেকে পাঠান সহকারী স্বাস্থ্য আধিকারিক (কাটোয়া) কবিতা শাসমল। ব্যক্তিগত সমস্যায় বুধবার দেখা করতে না পারায় শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্যকর্তার দফতরে যান কোরবান আলি। কবিতাদেবী বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির সমস্ত নথি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে পাঠানো হবে।’’
কাটোয়া শহরের স্টেশন বাজারের মসজিদ মার্কেটে ১৭ বছর ধরে চেম্বার বাগানেপাড়ার বাসিন্দা মহম্মদ কোরবান আলির। তাঁর প্রেসক্রিপশন এবং চেম্বারের সাইনবোর্ডে নামের পাশে লেখা রয়েছে ‘ডক্টর’। সঙ্গে একাধিক ডিগ্রি। যেমন, এসসিইউএম (স্টেট কাউন্সিল অফ ইউনানি মেডিসিন), আরসিএইচএম ভেল্লোর (রিসার্চ সেন্টার অফ হার্বাল মেডিসিন), এআইইউটিসি (দিল্লি)। নিজেকে জেনারেল ফিজিশিয়ান হিসাবেও দাবি করা রয়েছে সেই প্রেসক্রিপশনে। কোনও রেজিস্ট্রেশন নম্বর না থাকলেও প্রেসক্রিপশনে রয়েছে ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) লোগো। রোগীদের অ্যালোপ্যাথি ওষুধও তিনি দেন।
সম্প্রতি কাছারি রোডেও চেম্বার খুলেছেন কোরবান আলি। তাঁর ডিগ্রি নিয়ে সন্দেহ হওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ভাস্কর মণ্ডলের কাছে সব জানান। ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘বেশ কয়েক জন আমার রোগী অভিযোগ করেন যে, কোরবান আলির চিকিৎসায় সুফল মেলা তো দূর, উল্টে অসুস্থতা বেড়ে যাচ্ছে। তাই বিষয়টি মৌখিকভাবে সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে জানাই।’’
কোরবানের অবশ্য দাবি, ‘‘ক্যানসার-সহ ২২টি রোগ বাদে অন্য রোগের জন্য অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা করা যায় বলেই জানি। ইউনানি মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতিও সম্প্রতি সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, ইউনানি চিকিৎসকদের ইন্টার্নশিপ করতে হয় শম্ভুনাথ পন্ডিত, এমআর বাঙ্গুরের মতো হাসপাতালে।’’ কোরবানের আরও দাবি, যাঁরা বেশি খরচ করে চিকিৎসা করাতে পারেন না, তাঁদের স্বল্পমূল্যে দীর্ঘদিন ধরে তিনি চিকিৎসা করছেন। সহকারী মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানিয়েছেন, এসসিইউএম কাউন্সিল হলেও ওই কোরবান আলি সেটিকেই ডিগ্রি হিসাবে দেখিয়েছেন। পাশাপাশি প্রেসক্রিপশনে লেখা আরসিএইচএম একটি ১০ দিনের সার্টিফিকেট কোর্স বলে কোরবান নিজেই মেনে নিয়েছেন। তবে, তাঁর বিএসইউএম (ব্যাচেলর অফ ইউনানি মেডিনিসিন অ্যান্ড সার্জারি) ডিগ্রি আছে কিনা, তা জানা যায়নি।
কোরবানের অভিযোগ, বছর আটেক ধরে তৃণমূল সেবাদলের বর্ধমানের (গ্রামীণ) ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন। দলেরই একাংশ চক্রান্ত করে তাঁকে ফাঁসাতে চাইছে। যা শুনে কাউন্সিলর বলেন, ‘‘সাধারণ মানুষ ওঁর চিকিৎসা নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন বলেই আমি স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছি। চক্রান্তের অভিযোগ মিথ্যা।’’