বালাপোশ তৈরি করছেন গ্রামের মেয়েরা। নিজস্ব চিত্র।
শীত পড়ার আগে থেকেই নাওয়া-খাওয়ার সময় কমে যায় তাঁদের। সারা বছর কৃষিকাজ করলেও শীতের মরসুমে দু’পয়সা বেশি রোজগারের আশায় বালাপোশ তৈরি করেন পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম ১ ব্লকের মুড়গ্রাম গোপালপুর পঞ্চায়েতের শান্তিনগর গ্রামের বাসিন্দারা। তবে এ বার করোনা সংক্রমণের ভয়ে বরাত অনেকটাই কম, দাবি তাঁদের।
কারিগরদের দাবি, নতুন বালাপোশ নিয়ে শহর, গ্রামে ঘুরলেও ক্রেতারা সে ভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সংক্রমণের ভয়ে বাড়িতে পুরনো কাপড়, শাড়ি দিয়ে যাঁরা বালাপোশ বানাতে দিতেন, তাঁরাও সে ভাবে ডাকছেন না। সব মিলিয়ে লোকসান হচ্ছে, দাবি তাঁদের। পঞ্চায়েতের তরফ থেকে গ্রামে বসে বালাপোশ তৈরি করার জন্য দু’টি শেড তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। সেগুলিও আপাতত কাজে আসছে না, দাবি তাঁদের।
পঞ্চায়েত ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শান্তিনগর গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই বালাপোশ তৈরি করা হয়। মহিলারা সংসারের কাজের ফাঁকে বালাপোশ তৈরি করে মাসে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা রোজগার করেন। মহাজনেরা কাপড় থেকে শুরু করে তুলো, সুতো-সহ যাবতীয় কাঁচামাল দেন। বাড়িতে তা এনে বালাপোশ তৈরি করে ফের মহাজনের কাছে পৌঁছে দেন তাঁরা। এক-একটি বালাপোশে ৮০ টাকা মজুরি মেলে। দিনে দুই থেকে তিনটি বালাপোশ অনেক বাড়িতেই তৈরি করা হয়। মহাজনেরা আবার ওই বালাপোশ নিয়ে শহর, গ্রামে ঘুরে ৩৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি করেন এক-একটি বালাপোশ।
দুর্গাতলার বাসিন্দা সরস্বতী সিংহ বলেন, ‘‘সংসারের যাবতীয় কাজ করে আমি দিনে দু’টি বালাপোশ তৈরি করতে পারি। মাসে প্রায় হাজার চারেক টাকা রোজগার হয়। কিন্তু করোনার কারণে এ বছর তেমন কাজ নেই।’’
গ্রামের বালাপোশ ব্যবসায়ী সাধন মণ্ডল, বিকাশ মণ্ডলদের দাবি, ‘‘সারা বছর আমরা চাষের কাজ করি। কিন্তু শীত পড়লে বালাপোশের কাজ করি বেশি রোজগারের আশায়। দিনে হাজারখানেক টাকার ব্যবসা হয়। কিন্তু এ বছর সংক্রমণের ভয়ে কেউ জিনিস কিনতেই চাইছেন না।’’
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য অনিতা সরকার বলেন, ‘‘বালাপোশ কারবারিদের সুবিধার জন্যই ওই শেড দুটি করা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি, যাতে সারা বছরই ওখানে কাজ করতে পারা যায়।’’ কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজ বলেন, ‘‘সারা বছর যাতে কারিগরেরা কাজ পান, সে চেষ্টা করা হচ্ছে।’’