Accident in Bardhaman

বড় মেয়েকে বর্ধমানে ট্রেনে তুলতে এসেই বেঘোরে মৃত্যু মফিজার, অল্পের জন্য রক্ষা স্বামী ও দুই কন্যার

জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই স্টেশনে ছুটে গিয়েছিলেন আয়েশা। গিয়ে জানতে পারেন, ননদ মফিজাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ২৩:০২
Share:

বর্ধমান স্টেশনে ট্যাঙ্ক বিপর্যয়ের পর। — নিজস্ব চিত্র।

দিল্লি চলে যাচ্ছিলেন বড় মেয়ে। তাঁকে ট্রেনে তুলে দিতে স্টেশনে এসেই বেঘোরে প্রাণ গিয়েছে মা মফিজা খাতুনের! হাসপাতালে তাঁকে মৃতদেহের পাশে বসে ডুকরে কেঁদে উঠে আত্মীয় আয়েশা খাতুন বলেন, ‘‘ওঁর (মফিজা) ছ’বছরের মেয়েও আছে। এই বয়সে মাকে হারাল! ওর কী হবে এখন?’’

Advertisement

জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনার খবর পেয়েই স্টেশনে ছুটে গিয়েছিলেন আয়েশা। গিয়ে জানতে পারেন, ননদ মফিজাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। পরে সেখান গিয়ে তিনি জানতে পারেন, মফিজা মারা গিয়েছেন। আয়েশা জানান, বড় মেয়েকে শিয়ালদহ রাজধানীতে তুলে দিতেই মা, বাবা ও ছোট বোন স্টেশনে গিয়েছিলেন। আর সেই সময়েই এই ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় দুই মেয়েকে নিয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়েছিলেন স্বামী হায়াদ আলি। তাই তাঁরা প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন!

বেলা তখন সাড়ে ১২টা। ব্যস্ত সময়। তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে তখন আস্তে আস্তে ভিড় বা়ড়ছে। এমন সময়ে দুই ও তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের মাঝে ইংরেজ আমলের ওই জলের ট্যাঙ্কটির এক দিকের দেওয়াল ভেঙে হুড়মুড় করে জল বেরিয়ে আসতে শুরু করে। ট্যাঙ্কের ঠিক নীচেই শেড। ওই শেডের তলা তখন যাত্রীদের ভিড়ে গিজগিজ করছে। আচমকাই জলের তোড়ে ট্যাঙ্কের খানিকটা দেওয়াল ভেঙে পড়ে ওই শেডের উপর। টিনের শেড, লোহার কাঠামোর উপর বসানো। জল আর লোহার ভার সহ্য করতে না পেরে মুহূর্তের মধ্যেই শেডটি ভেঙে পড়ে ওই বিপত্তি ঘটে। এই ঘটনায় তিন জনের প্রাণ গিয়েছে। মফিজা তাঁদের এক জন। তিনি বর্ধমান শহরের লাক্কুডির কাটরার মুসলিম পাড়ার বাসিন্দা। বাকি দু’জন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা— সোনারাম টুডু (৩৫) এবং ক্রান্তি বাহাদুর (১৬)। ঘটনায় জখমও হয়েছেন অন্তত ৩৪ জন। তাঁদের বর্ধমান মে়ডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।

Advertisement

এই ঘটনায় রেলের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। নিহত ও আহত যাত্রীদের পরিবারের দাবি, ওই জলের ট্যাঙ্ক থেকে মাঝেমধ্যেই জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ত। এ ব্যাপারে রেলের কাছে অভিযোগও জানানো হয়। কিন্তু শুধু রং করেই ছেড়ে দেওয়া হত ট্যাঙ্কটি। ভেঙে পড়া ট্যাঙ্কটিকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, কিছু দিন আগেই সেটি রং করা হয়েছিল। কিন্তু কোথা থেকে কেন জল লিক করছে, তার পরীক্ষা করে মেরামত করা হয়নি। সঠিক ভাবে মেরামত হলে এই ঘটনা ঘটত না বলেই দাবি নিত্যযাত্রীদের একাংশের। রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে আয়েশাও বলেন, ‘‘আজ রেলের উদাসীনতার কারণেই এই ঘটনা।’’

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, কী কারণে ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ল, তা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিতে রাখা হয়েছে রেলের প্রবীণ তিন আধিকারিককে। তিন দিনের মধ্যে তাঁদের রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা। পাশাপাশি, তিনিই জানিয়েছেন, মৃতদের পরিবারকে পাঁচ লাখ ও জখমদের ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement