জাটগড়িয়ায় পুলিশি টহল। (ইনসেটে) কাজল শেখের বাড়ির ভাঙা দেওয়াল। নিজস্ব চিত্র।
শাসক দলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’কে ঘিরে দু’টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে, রবিবার রাতে। পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসার জাটগড়িয়ায় ঘটনায় তিন জন ও দুর্গাপুরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের গোঁসাইনগরের ঘটনায় পাঁচ জন আহত হয়েছেন। আহতদের দাবি, তাঁরা তৃণমূল করেন। ‘হামলাকারীরা’ও তৃণমূলের বলে দাবি। দুই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। উভয় ক্ষেত্রে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁকসার জাটগড়িয়ায় নামানো হয়েছে ‘কমব্যাট ফোর্স’। সোমবার দিনভর গ্রামে টহল দেয় পুলিশ। সংঘর্ষে জড়িত সন্দেহে পাঁচ জনকে আটক করা হয়েছে। ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ কথা মানেননি। গলসির তৃণমূল বিধায়ক নেপাল ঘড়ুই বলেন, ‘‘ঘটনাটি জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।’’
স্থানীয় সূত্রের দাবি, রবিবার রাত ৯টা নাগাদ এলাকার কয়েক জন তৃণমূল কর্মী গ্রামেরই অসুস্থ এক ব্যক্তিকে দেখতে যাচ্ছিলেন। অভিযোগ, পথে তাঁদের উপরে রড-লাঠি নিয়ে হামলা চালান কাঁকসা ব্লক তৃণমূল সভাপতি দেবদাস বক্সীর অনুগামীরা। মারধর করে পালিয়ে যান হামলাকারীরা। হামলায় জখম হন তিন জন। তাঁদের দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, “ওই ঘটনায় এক পক্ষ লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। তার ভিত্তিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে পাঁচ জনকে। এলাকায় টহল দিচ্ছে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”
জাটগড়িয়ার বাসিন্দা তথা তৃণমূলের প্রাক্তন অঞ্চল সভাপতি কাজল শেখের অভিযোগ, “কম-বেশি ৫০ জন লাঠি ও রড নিয়ে আমাদের উপরে হামলা চালায়। তারা সকলেই দলের কাঁকসা ব্লক সভাপতি দেবদাসের অনুগামী। আমাদের তিন জন আহত হয়েছেন। আমার বাড়িতেও চড়াও হয় তারা।”
পক্ষান্তরে, দেবদাসের দাবি, “ওই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। পাড়ায় কোনও বিবাদের জেরে ওই ঘটনা ঘটেছে।” যদিও মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ‘তৃণমূল’ কর্মী আজহার মণ্ডলের অভিযোগ, “বিনা প্ররোচনায় দেবদাসের অনুগামীরা আমাদের উপরে হামলা করে।” আহত আর এক তৃণমূল কর্মী শেখ রাজার দাবি, “আমরা সকলেই তৃণমূল করি। এলাকায় অশান্তি বাধাতেই এই হামলা।”
গোঁসাইনগরের ঘটনায় দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে মারধর ও বোমাবাজির অভিযোগ এনেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতে একটি ক্লাবের কাছে দু’পক্ষের মধ্যে অশান্তি হয়। ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মী গৌরাঙ্গ বাগদির দাবি, “বিধানসভা ভোটের আগে বিজেপিতে গিয়েছিলেন কয়েক জন। এখন আবার তাঁরা তৃণমূলে ফেরার চেষ্টা করছেন।” অভিযোগ, তাঁদের কয়েক জনকে বিনা প্ররোচনায় মারধর করা হয়েছে। বোমাও ছোড়া হয়। পাল্টা, নিজেকে তৃণমূল কর্মী দাবি করে শান্তনু রায় নামে এক জন বলেন, “আমরা বরাবরই তৃণমূলেই আছি। বিধানসভা ভোটের সময়ে বুথে এজেন্ট ছিলাম। ওঁরাই দল ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।” তাঁর পাল্টা অভিযোগ, এখন কর্তৃত্ব দেখাতে তাঁদের ছেলেদের মার করা, বোমা ছোড়া হয়।
দুই ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সভাপতি, বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের মন্তব্য, “কাঁকসার ঘটনাটি ‘কাটমানি’ ও ‘তোলাবাজি’র ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে লড়াই। আর দুর্গাপুরে পুরসভা ভোট এগিয়ে আসছে বলেই, গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বাড়ছে তৃণমূলে।” সিপিএমের পশ্চিম বর্ধমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডল বলেন, “বিরোধীদের মারধর করে ক্ষান্ত হচ্ছে না ওরা। এখন কর্মীরা নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে। ফল ভুগতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।” এ সব অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি তৃণমূল নেতৃত্ব। দলীয় নেতা তথা তৃণমূলের দুর্গাপুরের আহ্বায়ক মৃগেন্দ্রনাথ পাল বলেন, “পুরো বিষয়টি দলের উচ্চ নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে।”
রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, “কিছু লোক আছেন, যাঁরা কোনও দিনই অন্য দলে যাননি। আবার অনেকে আছেন, যাঁরা ঘুরে তৃণমূলে এসেছেন। কারা দলের শৃঙ্খলা মেনে চলছেন, আর কারা তা মানছেন না— সব দিকে নজর রাখা হচ্ছে।”