Power Theft

ট্রান্সফর্মার বসিয়ে চুরি, নজর পরিদর্শনে

বিদ্যুৎ চুরির বহরে জেলা তো বটেই, রাজ্যের মধ্যেও সামনের সারিতে নাম রয়েছে কেতুগ্রাম, ভাতার, গুসকরা ও রায়না-জামালপুর এলাকার। সে কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিগমের ‘লোকসান’ কমছে না।

Advertisement

সৌমেন দত্ত

বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৯:২৪
Share:

মাঠে ট্রান্সফর্মার। নিজস্ব চিত্র

এলাকায় বিদ্যুৎ চুরি হচ্ছে কি না, পরিদর্শনে গিয়েছিলেন আধিকারিকেরা। চুরির যে পদ্ধতি তাঁদের নজরে পড়ে, তাতে চমকে ওঠেন তাঁরা। রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ওই কর্তারা কেতুগ্রামের আনখোনা পঞ্চায়েত এলাকায় দেখেন, খেত জমিতে মাচা তৈরি করে রীতিমতো ট্রান্সফর্মার বসিয়ে বিদ্যুৎ চুরি চলছে! আবার, বাঁশের বেড়া দিয়ে জমি ঘিরে সেখানে ট্রান্সফর্মার বসিয়ে বিদ্যুৎ চুরির ছবিও উঠে এসেছে, দাবিদফতর সূত্রের।

Advertisement

শুধু কেতুগ্রাম নয়, পূর্ব বর্ধমানের বিভিন্ন ব্লকে এ ভাবে ট্রান্সফর্মার বসিয়ে বিদ্যুৎ চুরির তথ্য তাঁদের কাছে এসেছে বলে সংশ্লিষ্ট দফতর সূত্রের দাবি। কর্তাদের অভিযোগ, এ ভাবে বিদ্যুৎ চুরি করতে গিয়েই সুরক্ষায় ঘাটতি হচ্ছে। অনেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যাচ্ছেন। যা নিয়ে চিন্তা বাড়ছে দফতরের। আধিকারিকেরা জানান, সুরক্ষায় জোর দেওয়ার জন্য দফতরের ঠিকাদার, কর্মীদের যেমন সুরক্ষার পাঠ দেওয়া হচ্ছে, সাধারণ মানুষকেও সচেতন করায় নজর দেওয়া হচ্ছে।

রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার জোনাল ম্যানেজার (বর্ধমান) তথা রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য ইঞ্জিনিয়ার পার্থপ্রতিম দত্ত বলেন, ‘‘বিদ্যুৎ-সুরক্ষার উপরে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। এক দিকে, বিদ্যুৎ চুরি আটকে লোকসান কমানো, সুরক্ষা-বিধির মধ্যে উপভোক্তাদের সচেতন করা হচ্ছে। তেমনই, আমাদের ঠিকাদারেরা সুরক্ষা-বিধি ভাঙলে বা গাফিলতি দেখলে সঙ্গে-সঙ্গে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

Advertisement

কোথাও বাড়ি-বাড়ি অবৈধ সংযোগ, কোথাও বিদ্যুৎ চুরি করে সাবমার্সিবল পাম্প বা গভীর নলকূপ চালানোর অভিযোগ তো রয়েছেই। তার সঙ্গে, রাতারাতি ট্রান্সফর্মার তৈরি করে বিদ্যুৎ চুরির ঘটনা সামনে এসেছে বলে বিদ্যুৎ দফতরের অভিযোগ। দফতর সূত্রের দাবি, জেলায় বড় অঙ্কের বিদ্যুতের বিলও ‘বকেয়া’ রয়েছে। সে জন্য লোকসানের অঙ্কও বেশি। পূর্ব বর্ধমানে ২,৯৬,০৫৯টি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। বকেয়া বিলের পরিমাণ প্রায় ২৯৬ কোটি টাকা। আবার, জেলায় ১৮,৯০৬টি সাবমার্সিবল থেকে বিদ্যুৎ দফতরের পাওনা প্রায় ১৯৫ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ভবন বা শিল্প-সংস্থা থেকেও ১১ কোটি টাকা পাবে বিদ্যুৎ দফতর।

দফতরের দাবি, বিদ্যুৎ চুরির বহরে জেলা তো বটেই, রাজ্যের মধ্যেও সামনের সারিতে নাম রয়েছে কেতুগ্রাম, ভাতার, গুসকরা ও রায়না-জামালপুর এলাকার। সে কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিগমের ‘লোকসান’ কমছে না। দফতরের হিসাবে, ২০২০-২১ সালে পূর্ব বর্ধমানে বিদ্যুতের পরিষেবা দিতে দিয়ে গড়ে রাজস্ব ক্ষতি (এটিসি লস) ছিল ৩৬.০৯ শতাংশ। পরের বছর (২০২১-২২) কিছুটা কমে হয় ৩২.২৩ শতাংশ। অর্থাৎ, ১০০ টাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ করে পূর্ব বর্ধমান জেলা থেকে এই টাকা আদায় হয় না সংস্থার। রাজস্বে ক্ষতির পরিমাণ ২০২০-২১ বর্ষে প্রায় ২৪৬ কোটি টাকা ও গত বছর প্রায় ২২৭ কোটি টাকা। কর্তাদের দাবি, দফতরের গাফিলতিতে কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও, বিদ্যুৎ চুরি করতে গিয়েও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটছে বেশ কিছু। তাই সুরক্ষার বিষয়টিতে নজর দেওয়া হচ্ছে বলেজানিয়েছে দফতর। (চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement