ইটেডাঙায় তৃণমূলের দেওয়াল লিখন। — নিজস্ব চিত্র।
বছর ১৫ পরে আবার পঞ্চায়েত ভোট দিতে পারবেন কাঁকসার বিদবিহার পঞ্চায়েতের কিছু এলাকার বাসিন্দারা। এই পঞ্চায়েত এলাকায় ২০১৩ ও ২০১৮-য় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছিল তৃণমূল। এ বারও ১৫টি সংসদের সাতটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছে তারা। কিন্তু আটটি আসনে লড়াই হচ্ছে। ঘটনা হল, বাম আমল থেকেই এই পঞ্চায়েত এলাকা রাজনৈতিক অশান্তির জন্য সংবাদ শিরোনামে। এ বারেও সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে। এই আবহে, পঞ্চায়েতে ভোট দিতে পারবেন ভেবে খুশি হলেও, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাসিন্দাদের একটাই আর্জি, ভোটকে কেন্দ্র করে অশান্তি যেন না হয়।
অজয় নদের ঘেঁষা বিদবিহার পঞ্চায়েতে শেষ বার ভোট হয়েছিল ২০০৮-এ। জিতেছিল সিপিএম। তারও আগে, ১৯৯৮ সালে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয় এই পঞ্চায়েতের বাসুদেবপুর গ্রাম। অভিযোগ ওঠে খুন, বাড়িতে আগুন দেওয়ার। এলাকায় ছুটে এসেছিলেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। প্রতি ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে। সিপিএম অভিযোগ মানেনি।
তার পরে অজয়ে গড়িয়েছে বহু জল। সন্ত্রাসের অভিযোগের অভিমুখটা বদলে গিয়েছে। ২০১৩, ২০১৮ এবং এ বারেও অভিযোগকারী সিপিএম-সহ বিরোধীরা। অভিযুক্ত তৃণমূল। তবে অন্য বার বিরোধী প্রার্থীরা না থাকলেও, এ বার আটটি আসনে লড়াই হবে। এখানকার ১৫টির মধ্যে ১৩টি সংসদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিল সিপিএম। তবে শেষ পর্যন্ত টিকে রয়েছেন আট জন প্রার্থী। তার মধ্যে দু’টিতে রয়েছেন বিজেপি প্রার্থীরাও। সিপিএমের অভিযোগ, বিদবিহারে তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্য তাঁদের পাঁচ প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বীরেশ্বর মণ্ডলের দাবি, “তৃণমূলের অত্যাচার থেকে মানুষ মুক্তি পেতে চাইছেন। তাই এ বারে লড়াই হচ্ছে। মানুষ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এগিয়ে আসছেন।” বিজেপির বর্ধমান সদর সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি রমন শর্মারও অভিযোগ, “তৃণমূলের সন্ত্রাসের জন্যই আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক, এত দিন পরে ফের ভোট হচ্ছে বিদবিহারে। আমরা লড়াই করব।”
যদিও, সন্ত্রাসের অভিযোগ উড়িয়ে দিচ্ছেন তৃণমূলের কাঁকসা ব্লক সভাপতি ভবানী ভট্টাচার্য। তাঁর কথায়, “সিপিএমের সন্ত্রাস এখনও মানুষের স্মৃতিতে টাটকা। বিজেপিকে কেউ বিশ্বাস করে না। ফলে, বিরোধীরা প্রার্থী খুঁজে পাননি। সন্ত্রাসের মিথ্যা অভিযোগ করে বিরোধীরা নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতা ঢাকতে চাইছেন।”
এমন এক রাজনৈতিক আবহে, ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গিয়েছে, বাসিন্দারা প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে চাইছেন না। তবে তাঁদের মধ্যে থেকেই কয়েক জন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, “পঞ্চায়েতে ভোট দিতে পারব, এটা আনন্দের। তবে ভোট নিয়ে মারামারি, হিংসাটা যেন না হয়, সাধারণ ভোটার হিসাবে এটুকুই আমাদের চাওয়া।”— জনতার এই ‘চাওয়া’ পূরণ হয় কি না, তাবলবে সময়ই!