প্রতীকী ছবি।
এক দিকে কান্না, অন্য দিকে আক্ষেপ দোষীদের ফাঁসির সাজা না হওয়ায়! জামালপুরে জোড়া খুনের মামলায় বুধবার বর্ধমান আদালত ১৮ জনকে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা ঘোষণার পরে এমনই প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে মৃত ও দোষীদের পরিবারে। রায়ের এ দিন যে এলাকার ঘটনা, সেই এলাকায় অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে মোতায়েন করা হয় পুলিশ। প্রকাশ্যে রায় নিয়ে আলোচনাও করতে শোনা যায়নি।
বিচারকের রায় শুনে সাজাপ্রাপ্তের পরিবারগুলি অতান্তরে পড়েছে। জানা গিয়েছে, কাল, শুক্রবার এক সাজাপ্রাপ্তের মেয়ের বিয়ে। এ অবস্থায় কী ভাবে বাড়ির মেয়ের বিয়ে হবে, তা নিয়ে চিন্তায় পরিবারটি। সিপিএমের জামালপুর লোকাল কমিটির সদস্য মিলন মালিকের নেতৃত্বেই জোড়া খুন হয়েছিল বলে থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। এ দিন তিনি এবং তাঁর দুই ছেলে ঝন্টু মালিক ও মনোজ মালিকেরও যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা শুনিয়েছেন বিচারক। তাঁদের আত্মীয় সুদেব মালিকও রয়েছেন দোষীর তালিকায়। এ ছাড়া একই পরিবারের চার ভাই সাজা পেয়েছেন, এমনও রয়েছে। এ দিন বিকেলে বর্ধমানের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক (প্রথম) শেখ মহম্মদ রেজা রায় ঘোষণার পরেই ১৮ জন সাজাপ্রাপ্তই এজলাসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রত্যেকেরই এক রা, “আমরা নির্দোষ। ঘটনার সম্পর্কে কিছু জানা ছিল না।” একই বক্তব্য চলতি বছরে সিপিএমের হয়ে জ্যোৎসিরাম পঞ্চায়েতের মহিদিপুর গ্রামে মনোনয়ন জমা করা হাবলা সাঁতরার।
তবে এ দিন রায় ঘোষণার পরে সেই সময়ের ‘লাল-সন্ত্রাসে’র অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেতা, কর্মীরা। এলাকার একাধিক তৃণমূল নেতা জানান, সময়টা ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর। ভোটের আগে শুরু হয়েছিল গ্রাম দখলের রাজনীতি। ওই বছর ১৪ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে হুগলি ঘেঁষা জামালপুরের জ্যোৎসারি পঞ্চায়েতের অমরপুর, সিয়ালি, কোড়া উজিরপুর, পার উজিরপুর-সহ বেশ কিছু গ্রামে সিপিএম সন্ত্রাস চালায় বলে অভিযোগ। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে অমরপুরের ঈশা হক মল্লিককে খুন করা হয়। খুন হন বাড়িতে ভাত খেতে বসা উজিরপুরের পাঁচু দাসও। সরকারি আইনজীবী শিবরাম ঘোষালের দাবি, “ওই দু’জনকে তির মেরে ঘায়েল করার পরে নৃশংস ভাবে পিটিয়ে-খুঁচিয়ে খুন করা হয়। মৃতদের দেহে তির গাঁথা ছিল!”
এ দিন বিকেলে রায় ঘোষণার পর এলাকায় দেখা গেল, চার দিকে সুনসান। রায় নিয়ে প্রকাশ্য-আলোচনাতেও যেন অঘোষিত ‘নিষেধ’ জারি হয়েছে। কেন এমনটা? তৃণমূলের কয়েকজনকে নিচু স্বরে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমরা খুশি। কিন্তু এ বিষয়ে কথা বললে এলাকায় ভুল বার্তা যেতে পারে।’’ তবে চুপ নেই নিহতের পরিবারের লোকজন। বাড়িতে বসে ঈশা হক মল্লিকের ৮৮ বছরের মা মর্জিনা মল্লিক বলেন, “ছেলের ডাক নামে আরও এক জন ছিল গ্রামে। প্রথমে ভেবেছিলাম, অন্য জনের বিপদ হয়েছে, ছেলের নয়। পরের দিন টিভি-তে ছেলের মুখ দেখিয়েছিল। কিন্তু ওই ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখতে পারিনি। ফাঁসি চেয়েছিলাম দোষীদের।” ঈশা হকের স্ত্রী রেহেনা বিবির দাবি, “শয়তানরা দশটা আঙুল কেটে নিয়েছিল! স্বামী মারা যাওয়ার পর ভয়ে চোখের পাতা এক করতে পারতাম না।” সে দিনের ‘ভয়ঙ্কর’ ঘটনা কথা মনে করে পাঁচুবাবুর স্ত্রী কল্যাণীদেবী বলেন, “ওনার নাকটা পর্যন্ত ক্ষত-বিক্ষত করে দিয়েছিল। গোটা বাড়িতে লুট চলে। ওদের ফাঁসি ছাড়়া আর কী কামনা করতে পারি।”
এ দিন অধিকাংশ দোষীদের বাড়ি তালাবন্ধ ছিল। কয়েকটি বাড়িতে মহিলারা থাকলেও তাঁরা কথা বলতে চাননি। তবে এক সাজাপ্রাপ্তের মেয়ের বিয়ে কাল, শুক্রবার। সেই বাড়ির এক যুবক বলেন, “পরিস্থিতি যাই হোক, সবাই মিলে বিয়েটা দেওয়া হবেই।’’