—প্রতীকী ছবি।
প্যারা মেডিক্যালের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রীর অস্বাভাবিক মৃত্যু পূর্ব বর্ধমানের শক্তিগড়ে। শহরের বামপাড়য় ভাড়াবাড়ির ঘর থেকে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, মৃতার নাম বৃষ্টি বেরা (১৯)। তাঁর বাড়ি বাঁকুড়ার কতুলপুর থানার নাইবুনি গ্রামে। তিনি বর্ধমানের ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে বামচান্দাইপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ‘ডিপ্লোমা ইন মেডিক্যাল টেকনোলজি’র শিক্ষানবিশ হিসাবে কর্মরত ছিলেন। এই হাসপাতালের কিছুটা দূরে বাড়ি ভাড়া করে থাকতন বৃষ্টি। সেখান থেকেই শনিবার সন্ধ্যায় তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়।
তরুণীর দেহ উদ্ধার হওয়ার পর রবিবার তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে শক্তিগড় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, ওই হাসপাতালের কর্মীদের খারাপ ব্যবহারে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন বৃষ্টি। যখন তখন তাঁকে কাজে ডেকে পাঠানো হত। শারীরিক ভাবেও উত্ত্যক্ত করা হত তাঁকে। এ সব আর সহ্য করতে না পেরেই বৃষ্টি আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি পরিবারের লোকেদের। জেলার ডিএসপি অতনু ঘোষাল বলেন, ‘‘একটা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। হাসপাতালের কর্মী এবং অন্যান্য ট্রেনিদের সঙ্গে কথা বলা হবে।’’ বৃষ্টির দেহ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের পুলিশ মর্গে পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।
বৃষ্টির বাবা শুভেন্দু বেরা জানান, শনিবার বাড়ি মালিকের কাছ থেকে তিনি খবর পান যে, মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন! তার পরেই তাঁরা ওই ভাড়াবাড়িতে ছুটে যান। শুভেন্দু জানান, ‘‘মেয়ে ওর মায়ের কাছে প্রায়ই বলত যে, হাসপাতালে ওকে খারাপ দৃষ্টিতে দেখা হয়। কিন্তু তার জন্য মেয়ে আত্মহত্যা করবে, ভাবতেই পারছি না। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, মেয়ের মৃত্যুতে যেন সঠিক তদন্ত হয়।’’ পিসেমশাই সন্দীপ সামন্ত বলেন, ‘‘হাসপাতালে নাকি অনেকে খারাপ ইঙ্গিত দিত ওকে। বাড়িতেও সে কথা জানিয়েছিল বৃষ্টি। মাঝে ১০ দিন হাসপাতালে যায়নি ও। তার পরেই এই ঘটনা। ঘরের দরজা বন্ধ না করে মেয়ে আত্মহত্যা করল, এটা নিয়ে সন্দেহ হচ্ছে। মেয়ের মোবাইলটাও এখনও চোখে দেখিনি।’’
পরিবারের পক্ষ থেকে দায়ের হওয়া অভিযোগপত্রে হাসপাতালের দুই আধিকারিক সৌমেন্দ্র সাহা সিকদার এবং অনিমেষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে। তার প্রেক্ষিতে সৌমেন্দ্র বলেন, ‘‘মেয়েটির সঙ্গে আমার কোনও পরিচয় ছিল না। কেন এই ঘটনা ঘটল, আমি জানি না। কেন আমার নামে অভিযোগ করা হল, সেটাও বুঝতে পারছি না।’’ অনিমেষ বলেন, ‘‘মেয়েটি খুব হাসিখুশি ছিল। সকলের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করত। আমরা ভীষণ মর্মাহত। যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা একেবারেই সত্য নয়।’’ পরিবারের তরফে শক্তিগড় থানায় দেওয়া অভিযোগপত্রের প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্যের মহিলা কমিশন এবং রাজ্যের পদস্থ পুলিশকর্তাদেরও।