হাবিবুল মণ্ডল ও বাবু শেখ।
বাড়ির পথে ফের পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হল এ রাজ্যের দুই পরিযায়ী শ্রমিকের। জখম হয়েছেন বেশ কয়েকজন। সোমবার দুপুরে দুর্ঘটনাটি ঘটে ঝাড়খণ্ডে রাঁচীর কাছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতেরা পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীর বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে পূর্বস্থলী ছাড়া, হুগলি-সহ কয়েকটি জেলার বাসিন্দারা রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) বিজয় ভারতী মঙ্গলবার বলেন, ‘‘ঝাড়খণ্ডে বাস দুর্ঘটনায় জেলার দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের করোনা-পরীক্ষা করানো হবে। তার পরে নিয়ম অনুযায়ী পদক্ষেপ হবে।’’ পূর্বস্থলী দক্ষিণের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ (জনস্বাস্থ্য) বাগবুল ইসলামকে দেখতে বলেছি।’’ বাগবুল জানান, দুর্ঘটনায় পড়া শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের বগপুরের বাসিন্দা হাবিবুল মণ্ডল (১৮) ও সমুদ্রগড়ের বুনোপুকুরের বাসিন্দা বাবু শেখ (২০) নামে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আহতদের তালিকাও মিলেছে।
মহকুমাশাসক (কালনা) সুমনসৌরভ মোহান্তিও বলেন, ‘‘দুর্ঘটনাগ্রস্তদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ পূর্বস্থলী ১ বিডিও নীতিশ বালা জানান, ঝাড়খণ্ডে দুর্ঘটনায় মৃত দু’জন ছাড়া, দশ জন আহতের একটি তালিকা মিলেছে, যাঁরা কালনা মহকুমা এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের মধ্যে বগপুরের সাত জন এবং সমুদ্রগড়, কালনা ও মন্তেশ্বরের এক জন করে রয়েছেন বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। বিডিও বলেন, ‘‘আহতদের এলাকায় ফেরাতে এবং দেহ আনতে বাস ও অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হচ্ছে।’’
দুর্ঘটনায় আহত শ্রমিকেরা ফোনে জানান, রাঁচি পেরনোর আধ ঘণ্টা পরে একটি পাহাড়ি রাস্তায় বাঁকের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় তাঁদের বাস। কমবেশি সকলেই আহত হন। তাঁদের উদ্ধার করে কিলোমিটার দশেক দূরে আরআইএমএস হাসপাতালে পাঠানো হয়। মুম্বই থেকে ফেরা দলটিতে ছিলেন হুগলির গুড়াপের বাসিন্দা মোজাফ্ফর রহমান। মঙ্গলবার তিনি ফোনে বলেন, ‘‘পূর্ব বর্ধমান, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগণা-সহ নানা জেলার ২৩ জন ফিরছিলাম। আমাদের বাড়ি ফেরাতে প্রশাসনের সাহায্য চেয়েছি। প্রশাসনিক তৎপরতাও শুরু হয়েছে বলে জেনেছি।’’
এ দিন সকালে দুঃসংবাদ আসার পর থেকেই পড়শিদের ভিড় বগপুরের হাবিবুল ও বাবুর বাড়ির সামনে। হাবিবুলের বাবা লুতফর মণ্ডল জানান, অভাবের সংসারে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পরেই মুম্বই চলে গিয়েছিলেন তাঁর একমাত্র ছেলে। এলাকার অনেকে সেখানে গয়নার কাজ করতে যান। তাঁদের সঙ্গেই গিয়েছিলেন হাবিবুল। মাস সাতেক আগে শেষ বার বাড়ি আসেন। লুতফর বলেন, ‘‘দিন তিনেক আগে ফোনে শেষ কথা হয় ছেলের সঙ্গে। তখন জানিয়েছিল, বাড়ি ফেরার জন্য মুম্বই থেকে বাসে উঠছে ওরা। সোমবার রাত ৮টা নাগাদ ফোনে দুর্ঘটনার খবর পাই।’’ এ দিন সকালে এক প্রতিবেশীর ফোনে ছেলের মৃত্যুর খবর আসে, জানান তিনি।
বাবু শেখের বাবা নাসের শেখ পেশায় খেতমজুর। এ দিন সকালে দুঃসংবাদ পাওয়ার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। পরিবার সূত্রে জানা যায়, বাবু বছর দু’য়েক বাড়ি আসেননি। সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ শেষ বার ফোন করে বাবাকে তিনি জানান, খুব তাড়াতাড়িই বর্ধমানে পৌঁছে যাবেন তাঁরা। একটি গাড়ির বন্দোবস্ত করতে হবে। কিন্তু বিকেলে দুর্ঘটনা খবর মেলে। তার পর থেকেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন তাঁরা। দুর্ঘটনার জন্য কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারকে দোষারোপ করছেন কি না, সে প্রশ্নে নাসের শেখ বলেন, ‘‘চালক সতর্ক থাকলে তো এই ঘটনা ঘটত না। সে জন্যই ছেলেকে হারাতে হল। সরকারকে আর কী দোষ দেব!’’
এ দিন হাবিবুল ও বাবু, দু’জনেরই বাড়িতে যান পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ পরিমল দেবনাথ, বগপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সইদুল শেখ ও পঞ্চায়েতের প্রাক্তন উপপ্রধান বদরুল আলম মণ্ডল। পরিমলবাবু জানান, মন্ত্রী স্বপন দেবনাথের নির্দেশে তাঁরা মৃতদের বাড়িতে এসেছেন। পরিজনদের জানিয়েছেন, দেহ ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পঞ্চায়েতও পরিবারগুলির পাশে রয়েছে বলে আশ্বাস তাঁদের।